পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী দেখাইবে না, বিধান এই কথা বলিলে শ্যাম সায় দিয়া গেল। কিন্তু বোকের মাথায় বাড়িটাড়ি যখন সে ঠিক করিয়াই আসিয়াছে দু’চার দিন পরে চলিয়া তাদের যাইতে হইবে, বিধান এই কথা বলিলে শ্যামা তাতেও সায় দিল । ছেলের সব কথাতেই সে সায় দিয়া গেল । শেষে বিধান বলিল-পড়া ছেড়েছি বলে তুমি নিশ্চয়ই রাগ করেছ মা । শ্যামা একটু হাসিল,-না খোকা রাগ করিনি, বড় হয়েছ এখন তুমি বুঝে শুনে যা করবে। তাই হবে বাবা, তোমার চেয়ে আমি তো ভাল বুঝিনে, ख्। বুদ্ধি কতটুকু ? কাজে যোগ দিতে বিধানের দিন দশেক দেরি ছিল, যাই যাই করিয়াও দিন সাতোক এখানে তাহারা রহিয়া গেল । শীতল চাকরি ছাড়িয়া দিয়া নিশ্চিন্ত মনে জামগাছের তলে বসিয়া তামাক টানিতে লাগিল, পোষা কুকুরটি শুইয়া রহিল। তাহার পায়ের মধ্যে মুখ গুজিয়া। শীতলের ইচ্ছা আছে কুকুরটিকেও সঙ্গে লইয়া যাইবে কলিকাতায়, কিন্তু মনের ইচ্ছা প্ৰকাশ করিতে তার সাহস इझेल ब्रा । পাগল হওয়ার আর কোন লক্ষণ শ্যামার দেখা গেল না, সেদিন ঘুমাইয়া উঠিয়া তার যে অসাধারণ নীরবতা আসিয়াছিল। তাই শুধু কায়েমি হইয়া রহিল। আর যেন তাহার কোন বিষয়ে দায়িত্ব নাই, মতামত নাই সে মুক্তি পাইয়াছে। জীবন-যুদ্ধ তাহার শেষ হইয়া গিয়াছে, এবার বিধান লড়াই চালাক, বিধান সব ব্যবস্থা করুক, সংসারের ভালমন্দের দায়িত্ব থাক বিধানের, শ্যামা কিছু জানে না, জানিতে চাহে না-ঘরের মধ্যে অন্তঃপুরের গোপনতায় তার যা কাজ এবার তাই শুধু সে করিবে ; উপকরণ থাকিলে বুধিয়া দিবে পোলাও, না থাকিলে দিবে। শাক ভাত। বিধান তাহাকে এখানে রাখিলে এখানেই সে থাকিবে, কলিকাতা লইয়া গেলে কলিকাতা যাইবে, সব সমান শ্যামার কাছে। বিধানের চাকুরি লাভও শ্যামার কাছে যেন আর উল্লাসের ব্যাপার নয়, খুবই সাধারণ ঘটনা । এই তো নিয়ম সংসারের ? স্বামী-পুত্র উপার্জন করে, স্ত্রী ও জননী ভাত রাধে। আর ভালবাসে । আর সেবা-যত্ন করে। আর নির্ভয় নিশ্চিন্ত হইয়া থাকে অক্ষয় অমর একটি নির্ভরে। শহরতলিতে নয়, এবার খাস কলিকাতায় নূতন বাড়িতে শ্যামা নূতন সংসার እ ዓ ፡