পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

ভরসা দিত না।

 এই আশঙ্কা ও দুর্ভাবনার ভাগ শ্যামা কাহাকেও দিত না।

 ভাগ লইবার কেহ ছিল না। এক ছিল শীতল, আঁতুড়ের ধারে-কাছেও সে ভিড়িত না। ষষ্ঠীপূজার রাত্রে সে কেবল একবার নেশার আবেশে কি মনে করিয়া আঁতুড়ে ঢুকিয়াছিল। ছেলের শিয়রের কাছে ধপাস করিয়া বসিয়া পড়িয়াছিল এবং অকারণে হাসিয়াছিল।

 শ্যামা বলিয়াছিল — তুমি কি গো? বিছানা ছুঁয়ে দিলে?

 শীতল বলিয়াছিল, খোকাকে একটু কোলে নিই! — বলিয়া ছেলের বগলের নিচে হাত দিয়া তুলিতে গিয়াছিল।

 শ্যামা ঝটিকা দিয়া তাহার হাত সরাইয়া দিয়া বলিয়াছিল — কি কর? ঘাড় ভেঙ্গে যাবে যে!

 — ঘাড় শক্ত হয় নি?

 নাকে গন্ধ লাগায় এতক্ষণে শ্যামা টের পাইয়াছিল।

 — গিলেছ বুঝি? তুমি যাও বাবু এখান থেকে, যাও।

 নেশা করিলে শীতলের মেজাজ জল হইয়া করুণ রসে মন থমথম করে। সে ছলছল চোখে বলিয়াছিল, আর করব না। শ্যামা। যদি করি তো খোকার মাথা খাই!

 শ্যামা বলিয়াছিল — কথার কি ছিরি। যাও না বাবু এখান থেকে!

 শীতল বড় দমিয়া গিয়াছিল। যেন কাঁদিয়াই ফেলিবে। খানিক পরে শ্যামার বালিশটাকে শোনাইয়া বলিয়াছিল, একবার কোলে নেব না বুঝি!

 শ্যামা বলিয়াছিল, কোলে নেবে তো আসনপিঁড়ি হয়ে বসো। তুলবার চেষ্টা করলে কিন্তু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।

 শীতল আসনপিঁড়ি হইয়া বসিলে শ্যামা সন্তৰ্পণে ছেলেকে তাহার কোলে শোয়াইয়া দিয়াছিল। লোকে যেভাবে অচল দুয়ানি দেখে, ঝুঁকিয়া তেমনিভাবে ছেলের মুখ দেখিয়া শীতল বলিয়াছিল —যমজ নাকি, এ্যাঁ?

 নেশার সময় মাঝে মাঝে শীতলের চোখের সামনে একটা জিনিস দুইটা হইয়া যাইত।

 শুধু সেই একদিন। ছেলে কোলে করার সাধ শীতলের আর কখনো আসে

৩২