পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

ঘনিয়ে এল। — বলিয়া বিষ্ণুপ্রিয়ার গলায় মুক্তার মালা আর কানে হীরার দুল চোখে পড়ায় অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া মন্দা আবার বলিয়াছিল — তবে আপনি কি আর নিজে ছেলে নাওয়াবেন, ছেলে নাওয়াবার ক’টা দাই থাকবে আপনার!

 বিষ্ণুপ্রিয়া এ ধরণের কত মন্তব্য শুনিয়াছে। মৃদু হাসিয়া বলিয়াছিল, আপনার ছেলেমেয়ে ক’টি ঠাকুরবি?

 — মেয়ে নেই, তিনটি ছেলে, দুটি যমজ। কোলেরটিকে সঙ্গে এনেছি, বড় দু’টি শাশুড়ীর কাছে আছে।

 স্বানের জলে পাচটি দূর্বা ছাড়িয়া মন্দা জানালা বন্ধ করিয়াছিল। শ্যামা উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিয়াছিল, জল বেশি গরম নয় তো ঠাকুরঝি?

 মন্দা বলিয়াছিল — আমি কি পাগল বৌ, গরম জলে তোমার ছেলেকে পুড়িয়ে মারব?

 শ্যামা বলিয়াছিল — নরম চামড়া যে ঠাকুরঝি, একটু গরম হলেই সইবে না। — জলে হাত দিয়া সে চমকাইয়া উঠিয়াছিল, জল যে দিব্যি গরম গো।

 — জল বুঝি ঠাণ্ডা হতে জানে না বৌ?

 ইহার পরেই বিষ্ণুপ্রিয়ার বসিবার ভঙ্গি অত্যন্ত শিথিল হইয়া আসিয়াছিল। শ্যামার মধ্যে সে যেন হঠাৎ কি আবিষ্কার করিয়াছে। সে সহজে শ্যামার সঙ্গ ছাড়িবে না। বাড়ি হইতে বার বার তাগিদ আসিয়াছিল। বিষ্ণুপ্রিয়া বাড়ি যায় নাই। বসিয়া বসিয়া শ্যামার সঙ্গে রাজ্যের গল্প করিয়াছিল।

 কয়েকদিন পরে বিষ্ণুপ্রিয়া আবার আসিয়াছিল। কেহ টের পায় নাই যে সান্ত্বনা দিতে নয়, সে ছেলের জন্য শ্যামার শোক দেখিতে অসিয়াছিল। শ্যামার প্রথম সন্তান বাঁচিয়াছিল বারো দিন!


দুই

 দুইবছরের মধ্যে শ্যামার কোলে আবার ছেলে আসিল। সেই বাড়িতে, সেই ছোট ঘরে শরৎকালের তেমনি এক গভীর নিশীথে। কিন্তু মানুষের জীবনের অভাবের পূরণ আছে ক্ষতির পূরণ নাই বলিয়া প্রথম সন্তানকে শ্যামা ভুলিতে পারে নাই।

৩৪