পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রকাশকের
নিবেদন

 'কল্লোল’ যুগকে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রের তৃতীয় যুগ বলা যায়। এই যুগে যে কয়জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক গতানুগতিক ধারাবাহিক ভাবধারার গণ্ডিকে লঙ্ঘন করে সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়াসী ছিলেন তাঁদের মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিশেষ স্থান করে নিয়েছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অনেকেই সাহিত্যের পথে মাটির কাছাকাছি, মানুষের কাছাকাছি - কল্পনার রাজ্য ছেড়ে বাস্তবের কাছাকাছি আসবার প্রয়াসী ছিলেন। কিন্তু, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চরিত্র ও আঙ্গিক বিশ্লেষণের মধ্যে অনেকেরই ছিল স্বকীয়তা। অবশ্য, এইটাই স্বাভাবিক। মানিকের স্বকীয়তায় সে যুগে তিনি প্রায় অদ্বিতীয়, নিঃসঙ্গও বলা যেতে পারে। দুই একটি উপন্যাস এবং কিছু সংখ্যক গল্প বাদ দিয়ে তার সাহিত্য সৃষ্টির সমীক্ষা করতে গিয়ে প্রথমেই যেটা লক্ষ্যণীয় তা হলো - তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির পথে কাহিনী ও নাটকীয়তা তেমন প্রাধান্য পায় নাই। অথচ অন্তঃসলীলা ফল্গুর মতো সমাজ এবং জীবনের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টায় অলক্ষ্যে প্রায় সব ক্ষেত্রেই একটি বিদ্রোহের সুর। সুন্দর, সরল ও অনায়াসী জীবনকে তিনি প্রতিহত করতে চা’ন নাই, কিন্তু বাস্তব সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি নির্মমভাবে তাদের প্রাধান্যকে ম্লান করে দিয়েছেন। কোথাও কোথাও তাঁকে মনে হয় নির্দয় ও নিষ্ঠুর। কোথাও কঠোর পরোক্ষ বিদ্রুপে মেকী সভ্যতার আপাত সৌন্দর্য হাস্যাম্পদ! কোথাও ভদ্র পোশাকের অন্তরালে পঙ্কিল মনের ক্লেদাক্ত রুচিকে দেখে হতবাক হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। আবার কোথাও নানা বিপর্যয়ের ভিতরেও ফুটে উঠেছে সংবেদনশীল স্রষ্টার মনের কমনীয়তা।

 সকল দিক বিচার করে মানিক-সাহিত্য একটি আশ্চর্য সৃষ্টি। অবশ্যই সাহিত্যের মূল্যায়নে বিভিন্ন মত থাকবেই, এবং সেইটাই বাঞ্ছনীয়। সেই বিচারের ভাৱ সাহিত্যরসিকদের উপরে। একথা অনস্বীকার্য যে, এখনও অগণিত পাঠকবর্গ মানিক-সাহিত্য পাঠ এবং আলোচনায় আগ্রহী। তাঁর গ্রন্থাবলীৱ প্রথম খণ্ড অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যায়। এখনও তার চাহিদা অনেক। সেইজন্যই উৎসাহী হয়ে মানিক-সাহিত্যের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। নানা কারণে মানিক-সাহিত্যের প্রকাশের ক্রম অনুসারে গ্রন্থ সংকলন করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য, এ-কথা স্বীকার্য যে, এই খণ্ডে সংকলিত উপন্যাস, গল্প ও অন্যান্য বিষয় প্রায় সমধর্মী। মানিক যে নির্যাতিতদের কথা বলতে চেয়েছেন সেই সকল চরিত্র ও বক্তব্য এই খণ্ডে যথাসাধ্য সংকলিত।

 গ্রন্থপ্রকাশে কিছু-না-কিছু ত্রুটি থেকেই যায়। সেই ত্রুটি স্বীকার করে আমরা মার্জনাপ্রার্থী।

-প্রকাশক
১৩৫২