পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী বিরোধ ত্যাগ করিতে বলে বলিয়াই কি তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার মত উদারতা গবৰ্ণমেণ্টের হয় ? অথবা হয় ? কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারে না জ্যোতিৰ্ম্ময়। মনে হয়, কোথায় যেন একটা ধাধা আছে। দেশপূজ্য নেতা, স্বদেশী প্রতিষ্ঠান, স্বাধীনতার আন্দোলন সমস্ত কিছুরই বিরুদ্ধ সমালোচনা সত্যপ্রিয় যেমন করে, গবৰ্ণমেণ্টের নিন্দাও তো করে ? অবশ্য স্বাধীনতার মন্ত্র প্রচারকদের সমালোচনার সময় ভাষাটা যেমন তীব্ৰ হয়, এদের প্ররোচনায় দেশের যে সৰ্ব্বনাশ হইতেছে তার বর্ণনা যেমন রোমাঞ্চকর হয়, গবৰ্ণমেণ্টের নিন্দটা তেমন জমে না । শিক্ষার অব্যবস্থা, নদী নালার সংস্কারের অভাব, পাশ্চাত্য সভ্যতা প্রচারে সহায়তা, ভ্রান্তিপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ, এই ধরণের কয়েকটি বিষয়ে গবৰ্ণমেণ্টের ভুল দেখাইয়া সসম্রামে গবৰ্ণমেণ্টকে সতর্ক করিয়া দিয়াই সত্যপ্রিয় ক্ষান্ত হয়। তবু, এসব তো বিরুদ্ধ সমালোচনা ? সত্যপ্ৰিয় যে সত্য সত্যই দেশকে ভালবাসে, যত খাপছাড়া বা উদ্ভট সে ভালবাসা হোক, তার লেখা ও বক্তৃতায় তার যথেষ্ট পরিচয় থাকে । দেশের দুরবস্থার যে বৰ্ণনা লেখায় ও বক্তৃতায় সত্যপ্রিয় দেয়, দেশকে ভাল না। বাসিলে কেউ তা পারে ? নেতারা যা চায় সত্যপ্রিয়ও তাই চায়--কেবল তার উপায়টা একটু পৃথক, একটু অভিনব। কদিন আগেও সত্যপ্ৰিয়ের একটি পুস্তক জ্যোতিৰ্ম্ময় প্ৰকাশ করিয়াছে, তাতে সত্যপ্রিয় স্পষ্টই বলিয়াছে, সৰ্ব্বাগ্রে ভারতের প্ৰকৃত স্বাধীনত চাই, প্ৰকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্ৰত্যেক ভারতবাসীর চেষ্টা করা কীৰ্ত্তব্য :—বলিয়া প্ৰকৃত স্বাধীনতা কাকে বলে ধৰ্ম্ম ও শাস্ত্রগ্রন্থের সাহায্যে সেটা ব্যাখ্যা করিয়াছে। সংস্কৃত শ্লোকগুলি সম্ভবতঃ কেষ্টবাবুই সংগ্ৰহ করিয়া দিয়াছে। তা হোক, সেটা বড় কথা নয়, সংস্কৃত শ্লোকের অপার সমুদ্রে ভাড়াটে ডুবুৰী নামাইয়া রত্ব উদ্ধার করিলে দোষ হয় না, সেগুলি কাজে লাগাইতে পারাই আসল কথা । ব্যাখ্যার পর সত্যপ্ৰিয় নির্দেশ করিয়াছে, প্ৰকৃত স্বাধীনতা অর্জন করিবার উপায় । এই উপায় নির্দেশ করাই প্ৰবন্ধটির প্রধান উদেশ্য, প্ৰবন্ধটির নামই ছিল, “তেত্রিশ বৎসরে ভারতের স্বাধীনতা লাভের উপায়।’ ধৰ্ম্ম যখন লোপ পায়, সমাজ ব্যবস্থা বিকৃত হয়, দেশবাসীর দারিদ্র্য, অন্নাভাব, স্বাস্থ্যাভাব, অকালমৃত্যু, বীভৎস রূপ ধারণ করে, দেশহিতৈষীর তখন সৰ্বপ্রথম কৰ্ত্তব্য কি ? এ সমস্তের মূল কারণ অনুসন্ধান। ve