পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী ডাক্তার কি জবাব দিল ভালমত বোঝা গেল না। সিঁড়ি দিয়া নামাইয়া গাড়ী পৰ্য্যন্ত নেওয়ার জন্য ষ্ট্রেচারের মত একটা কিছুর ব্যবস্থার কথা ডাক্তার উল্লেখ করিলে যশোদা বলিল, “থাক, থাক, এদের আর কষ্ট দিয়ে কাজ নেই। আমিই নিয়ে যাচ্ছি। ওকে কোলে করে, তাতে ঝাকুনিও কম লাগবে।” শিশুর মত অপরাজিতার শরীরটা দু’হাতে অবলীলাক্রমে বুকের কাছে তুলিয়া নিয়া যশোদা নীচে নামিয়া গেল। তাকে বুকে ধরিয়া রাখিয়াই নিজে সে গাড়ীতে উঠিয়া বসিল । ডাক্তার ভিতরে আসিল, জ্যোতিৰ্ম্ময় আর সুবৰ্ণ সামনে বসিল । যশোদা ডাক্তারকে বলিল, “এইভাবেই রাখলাম, আবার নামাতে হবে তো । বারবার তোলা-নামার চেয়ে একভাবে থাকাই ভাল। কি বলেন ?? ডাক্তার সংক্ষেপে বলিল, “হঁ্যা ।” দক্ষিণের গেট দিয়া গাড়ী রাস্তায় পড়িতেই যশোদা কারও সঙ্গে পরামর্শও করিল না, কারও অনুমতি চাহিল না, চালককে সোজা হাসপাতালে যাইতে হুকুম দিয়া দিল। জ্যোতিৰ্ম্ময় চমকাইয়া উঠিল, সুবৰ্ণ অস্ফটি একটা শব্দ করিয়া আবার কঁাদিয়া ফেলিল, ডাক্তার চুপ করিয়া রহিল। যশোদার গা বোধ হয় বড় বেশীরকম জ্বালা করিতেছিল, ডাক্তারের লজ্জিত নীরবতাও তাকে থামাইয়া রাখিতে পারিল না, একটু পরে আবার বলিল, “হাসপাতালে না গিয়ে কি করি বলুন ? আপনাদের মত ডাক্তারের ভরসায় বাড়ী নিয়ে যেতে সাহস হল না।’ ডাক্তার এবারও কিছু বলিল না । এমার্জেন্সী ওয়ার্ডের একটা ঘরে অপরাজিতার মরণ রদ করিবার চেষ্টা চলিতে থাকে, বাহিকরে একটা কাঠের বেঞ্চে বসিয়া থাকে জ্যোতিন্ময়, যশোদা আৱ সুবৰ্ণ। প্ৰিয়জনকে হাসপাতালে দিবার একটা অযৌক্তিক অসুবিধা আছে, নিজেদের কিছুই কৱিবাৱ ক্ষমতা নাই, জানা থাকিলেও নিজেদের কিছু করা হইল না ভাবিয়া বড় কষ্ট হয়। একজন মরিতেছে আর এমন নিশ্চেষ্ট বসিয়া থাকা । এ যেন এক ধরণের অপরাধ । রাত তিনটার সময় ডাক্তার জানাইল, এখন তারা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ী বাইতে পারে। না, ঠিক নিশ্চিন্ত মনে নয়, আর ভয় নাই এমন কথা ডাক্তার EEE