পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলিতে পারে না, তবে এখনকার মত বিপদটা কাটিয়া গিয়াছে। অপরাজিত যদি নেহাৎ মরেই তবে তার মরিতে অন্ততঃ দু’একটা দিন সময় লাগিবে । এমন রূঢ়ভাবে যে ডাক্তার খবরটা জানাইল তা নয়, তার কথার মোটামুটি অর্থটা এই ৷ যশোদার সঙ্গে সুবৰ্ণকে বাড়ী পাঠাইয়া দিয়া জ্যোতিৰ্ম্ময় একাই হাসপাতালে বসিয়া রহিল। অপরাজিতাকে সে কি খুব ভালবাসে ? অপরাজিত মরিয়া গেলে খুব কষ্ট হইবে তার ? উত্তেজনার প্রতিক্রিয়া আর রাত্রি জাগরণের অবসাদের জন্য বোধ হয় মনটা ভোতা হইয়া গিয়াছে, ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিতেब् िब् | 薰妮 হাসপাতাল হইতে সে যখন বাহির হইল, রাত্ৰি প্ৰায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। রাস্তাৱ আলো নেভে নাই, কিন্তু চারিদিকে দিনের আলোর আবির্ভাবের আবছা সঙ্কেত টের পাওয়া যায়। ট্রাম ও বাস চলিতে আরম্ভ করিয়াছিল, কিন্তু জ্যোতিন্ময় হাটিতে আরম্ভ করিল। সমস্ত রাত জাগিয়া থাকার পর সহর ও সহরতলীর জাগরণ আরম্ভ হইবার সময়টা এই পথ দিয়া হাঁটিতে ভাল লাগিতেছিল । কয়েক ঘণ্টা পরে মানুষ ও গাড়ী-ঘোড়ার কি ভিড়টাই এই পথে আরম্ভ হইবে । সহরতলী হইতে সহরের দিকেই মানুষ চলিতে আরম্ভ করিবে বেশী, বিকালের দিকে যেন স্রোতটা ফিরিয়া আসিবে সহর হইতে সহরতলীর দিকে । পথটা এলোমেলোভাবে বহুদূর বিস্তৃত সারি-সারি রেললাইন ডিঙ্গাইয়া গিয়াছে। ব্রিজের উপর রেলিঙে ভর দিয়া জ্যোতিন্ময় একটু দাড়াইল । ওয়াগন বাছাই কৱিবাৱ জন্য ইস্পাতের রেখার দুৰ্বোধ্য আর জটিল রেখাচিত্ৰ দিয়াই সহর ও সহরতলীকে যেন ভাগ করা হইয়াছে। উচু থামের উপর হইতে এদিকে ওদিকে জোৱালো আলো ফেলিয়া কোন কোন লাইনের কিছু কিছু অংশ আলোকিত করা হইয়াছে, বাকীটা আবছা আলো-অন্ধকারে ঢাকা। ব্রিজের দু’পাশে বহুদূৱ পৰ্য্যন্ত অসংখ্য ওয়াগন বিশৃঙ্খলভাবে দাড়াইয়া আছে। কয়েকটা ওয়াগন ইঞ্জিনের ঠেলা খাইয়া আপনা-আপনি একদিকে আগাইয়া চলিয়াছে, লিভার ঠেলিয়া ঠেলিয়া সেগুলিকে সরাইয়া দেওয়া হইতেছে এক লাইন হইতে আৱেক লাইনে। দু’দিকে কাছে ও দূরে থামের মাথায় বসানো সিগন্যালের অনেকগুলি লাল-নীল আলো, মানুষের হাতের সঞ্চরণশীল আলোেৱ নড়িয়া নড়িয়া দূরের মানুষকে দুৰ্বোধ্য ইঙ্গিত 99.