পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

h অনুগ্রহটুিকু বাড়তি পাওনা মনে করিয়া তাদের কৃতাৰ্থ থাকা উচিত। প্ৰথম প্ৰথম যারা বোকামি করিয়া এই সহজ কথাটা বুঝিতে পারে না, তাদের সে ক্ষমাও করে, ভবিষ্যতে সাবধান হইবার সুযোগও দেয়। কিন্তু যে পুৱা টাকা মাহিনা দেয় সে প্রতিদানে পুৱা কাজ চাহিবে, দরদ আর ভালবাসা দেখানোর জন্য মাহিনী দিয়া মানুষ লোক রাখে না-এই সরল সত্যটা যার মাথায় কোন রকমেই ঢোকান যায় না, অগত্যাই সত্যপ্রিয় তাকে বিরাট ব্ৰহ্মাণ্ডে চরিয়া খাইবার জন্য মুক্তি দেয়। অবশ্য, এই রকম দরদ ও সহানুভূতির সঙ্গে ব্যবহার করে বলিয়াই সকলে হাসি মুখে দশ ঘণ্টার যায়গায় পনের ঘণ্টা কাজ করে, তিনজনের কাজ একজনে করে। কিন্তু সত্যপ্ৰিয় তো করিতে বলে নাই ? যার যতক্ষণ ইচ্ছা কাজ করুক না, সত্যপ্ৰিয়ের কি আসিয়া যায়, তার কাজ হইলেই হইল । জ্যোতিৰ্ম্ময় তাই আবার আমতা আমতা করিয়া বলিল, “আজ্ঞে, ছুটির দরকার হলেই আপনাকে বলব। এখন তো হাসপাতালেই রইল, দু’বেল গিয়ে শুধু দেখে আসা ।” ‘শ'খানেক টাকা। বরঞ্চ আপনি রাখুন, চিকিৎসার জন্য যদি দরকার হয় ?” এ আরেক বিপদ। যার যা প্ৰাপ্য তার বেশী একটি পয়সা কোনদিন কেউ সত্যপ্ৰিয়ের কাছে পায় নাই, কোনদিন পাইবেও না । সে যে দান করে হিসাব করিলে দেখা যায়, দানের রীতি, নীতি, প্ৰথা, নিয়ম, সামাজিক ও অন্যবিধ বাধ্যবাধকতা প্ৰভৃতি হিসাবে সেটাও গ্ৰহীতার প্রাপ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। কৰ্ম্মচারীদের হাতে টাকা গুজিয়া জোর করিয়া সাহায্য করিতেও দু’একবার সত্যপ্রিয়কে দেখা গিয়াছে । কিন্তু প্ৰত্যেক ক্ষেত্রে টাকা সত্যপ্ৰিয়ের ফিরিয়া আসে, কোথাও আসে। কাজে, কোথাও আসে বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনীয় সম্পর্কটা বজায় থাকাতে, কোথাও আসে প্ৰতিহিংসায় । সত্যপ্রিয় চলিয়া গেলে জ্যোতিৰ্ম্ময় স্বান করিতে গেল। খাইয়া আপিস যাইবে । যাওয়ার পথে হাসপাতালে খবর নিয়া যাইবে । সুবৰ্ণ বলিল, “আজকেও আপিস যাবে দাদা ?” “একবার না গেলে চলবে কেন ? সকাল সকাল ফিরে আসব।” “কি দরকার ? রাত্রিটাও আপিসে থেকে--সুবর্ণের মুখ বিবৰ্ণ, চোখ ফুলিয়া ܟܘܢ