পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী তারপর চোখ বন্ধ করে’। ভাববে, বিশ্ব-ব্ৰহ্মাণ্ডে যত জীবিত প্ৰাণী আছে সব ধীরে-বীরে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে’ নিও, কেউ যেন ঘরে না আসে। [f-* ছেলেটি কাতরভাবে বলিল, “আজ্ঞে, আমার ঘরে আমার চারটি ভাই-বোন শোয়, আমার বাপ-মাও ওঘরে থাকেন । ঘরে সব সময় লোক থাকে ৷” ‘অন্য ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা করে’ নিও ।” “আরেকটা ঘরে দাদা-বৌদি শোয়। আর ঘর নেই আমাদের।” ছেলেটি আর দাড়াইল না, একরকম পলাইয়া গেল। এই অবহেলাতেই সত্যপ্ৰিয় জ্বালা বোধ করে সব চেয়ে বেশী । কেউ শুনিতে চায় না, তার এত দামী দামী কথাগুলি সাধ করিয়া কেউ ধৈৰ্য্য ধরিয়া শুনিতে চায় না। না শুনিয়া যাদের উপায় নাই শুধু তারা শোনে, অন্য সকলে পালানোর জন্য ছটফট করে। এত হাল্কা মানুষের মন ? ডাক্তারের দিকে তাকাইয়া সত্যপ্রিয় বলিল, “এই সব অপদাৰ্থ ছেলের জন্যই দেশটা রসাতলে গেল।” ডাক্তার সায় দিয়া বলিল, “নিশ্চয় । ওদের কথা আর বলবেন না ।” তারপর পরীক্ষা হইল যামিনীর। তাকে সঙ্গে করিয়া চটের পাটসনের ওপাশে গিয়া মিনিট পনেরো পরে আবার ডাক্তার ফিরিয়া আসিল । যামিনীর সুন্দর মুখখানা তখন টুকটুকে লাল হইয়া গিয়াছে। এদিকে আসিয়া সে ঘাড় নীচু করিয়া সত্যপ্রিয়ের পিছনে দাড়াইয়া রহিল। সত্যপ্রিয় বলিল, “তুমি গাড়ীতে বোসে গিয়ে যামিনী । আমি ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলে’ আসছি।” যামিনীকে পরীক্ষা করিলা অজানা অচেনা গরীব এক ডাক্তার কিন্তু চিকিৎসা আরম্ভ করিল। সত্যপ্ৰিয়ের পরিচিত মন্ত নাম-করা কবিরাজ । যামিনীর জন্য নানা অনুপানের সঙ্গে পাথরের খালে কবিরাজী বড়ি পোষণ করা হইতে লাগিল, অনেকরকম সুপাচ্য ও পুষ্টিকর পথ্যের ব্যবস্থা হইল। ওষুধ ও পথ্যের ব্যবস্থা সত্যপ্রিয় সমস্তই মানিয়া নিল, কিন্তু একটা বিষয়ে কবিরাজের সঙ্গে তার মতের মিল হইল না । চিকিৎসার সময়টা যোগমায়াকে আত্মীয়ের কাছে পাঠাইয়া দেওয়ার প্রস্তাবে কবিরাজ ঘাড় নাড়িল । 98 OQ