পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ ভিত্তি চিরদিনই স্বীকৃত বা অস্বীকৃত বস্তুবাদ । যে বিশ্বাস নিয়েই বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও গবেষণা করে থাকুন, বস্তুজগতে মানবতার বাস্তব অগ্ৰগতিই চিরদিন র্তার একমাত্ৰ লক্ষ্য । নিত্য নতুন আবিষ্কারে বিজ্ঞান বদলে দিয়ে চলে সমাজ ও জীবনকে, বদলে দিয়ে চলে মানুষের চেতনাকে । এই চেতনায় জাগে সাহিত্যের কাছে নতুন চাহিদা এবং এই চেতনা প্ৰতিফলিত হয় নতুন আঙ্গিকে উপন্যাস রচনায়। গদ্য ভাষায় সাহিত্যে এল বাস্তব জীবনের পরিবেশ, চরিত্র ও ঘটনা ; নতুন পদ্ধতিতে মানুষের জীবন বোধের আকাজক্ষা মেটাতে আরম্ভ করলে উপন্যাস । বিজ্ঞানকে, মানুষের বস্তুবাদী চেতনার ক্রমবিকাশকে, একেবারে আর উপেক্ষা করতে না পেরে সাহিত্যকে নতুন একটি বিভাগ খুলতে হলো : অধ্যাত্মবাদের জের এবং ভাববাদ আত্মরক্ষার খাতিরে যুক্তিবাদের সাহায্যে বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করলে উপন্যাসের ধারা । যুক্তিবাদ খাটি দর্শনে বিশেষ খাতির পায়নি-ইতিহাস দর্শনকে যে মূল ভাগে ভাগ করেছে। ( অধ্যাত্মবাদ, ভাববাদ ও বস্তুবাদ ) তারই নানারকম আলতো বাদ হিসাবে অনেক শাখাপ্ৰশাখা। গজিয়েছে, যুক্তিবাদ তারই একটা । যুক্তিবাদ কারণ দেখায় না, যুক্তি দেয়। “এরকম হওয়া উচিত? এটাও যুক্তিবাদের যুক্তি। দর্শন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুক্তিবাদের অবদান খুবই সামান্য, সাহিত্যে উপন্যাসের নব-বিধান যেন যুক্তিবাদেরই জয়গান—আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হয়। আসলে সেটা বস্তুবাদেরই অগ্ৰগতি । অধ্যাত্মবাদ, ভাববাদ এবং বস্তুবাদ কোনটাই সমসাময়িক সুবিধাবাদের নীতি মানেনি। মানবতার বিকাশের মূলনীতি ক্ষয়বৃদ্ধি এগোনো পিছানোর বাস্তব কার্যকরী নীতিকেই মেনে এসেছে। বাদ নিয়ে বাদানুবাদের প্রবন্ধ লিখতে চাইনি। এটুকু ভূমিকা মাত্র। আমার অভিজ্ঞতায় এটুকু যাচাই হয়ে গিয়েছে গোড়াতেই। খুব সহজ করে বলতে গেলে বলা যায় যে, লেখক যে ভাব আর ভাবনাই সাজিয়ে দিন উপন্যাসে, ভিতটা তঁাকে গাঁথিতেই হবে খাটি বাস্তবতার। যতই খাপছাড়া উদ্ভট হোক উপন্যাসেরই চরিত্র, মাটির পৃথিবীর মানুষ হয়ে তাকে খাপছাড়া উদ্ভট হতে হবে। যত অসম্ভব ঘটনাই ঘটুক উপন্যাসে, সম্ভাব্য ঘটনাকে আশ্রয় করেই তাকে কাল্পনিক অসম্ভবতার স্তরে wo