পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তৃপ্ত হতে পারেন না।

 যে যশোদার সঙ্গে সত্যপ্রিয় শক্রতা করেছে পার্থিব তুলনায় সে কত অকিঞ্চিৎকর। অবিচল বুদ্ধির পাকে পাকে পর্যুদস্ত করেও যশোদাকে এই ধনী মালিক পরাভূত করতে পারে নি। এ সবের পেছনেও কিছু ছিল, যতটা বোঝা যায় তার চেয়ে বেশি, বিপরীত কিছু। মানিকবাবুর ভাষা ছাড়া সেই অগ্নিগর্ভ কামনার অত শান্ত ক্ষণস্থায়ী আত্মপ্রকাশ অনুভব করা যাবে না:

 “সত্যপ্রিয় এতক্ষণ অন্যদিকে চাহিয়াছিল, কথা বলিবার সময় সে কদাচিৎ শ্রোতার মুখের দিকে তাকায়। এবার যশোদার চোখে চোখ মিলাইয়া সে খানিকক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকাইয়া রহিল, তারপর মৃদুস্বরে বলিল, 'অন্য কেউ একথা বললে বিশ্বাস করতাম না, চাঁদের মা। তবে তোমার কথা আলাদা। তুমি কখনো মিথ্যা বল না'।

 সত্যপ্রিয়ের দৃষ্টি দেখিয়া যশোদা এক মুহূর্তের জন্য শিহরিয়া উঠিয়াছিল। যশোদার স্নায়ুগুলি এরকম শিহরণের উপযোগী করিয়া তৈরী হয় নাই; রাত দুপুরে হঠাৎ বাড়ীর অন্ধকারে একটা ভূত দেখিলেও সে ভালো করিয়া চমকাইয়া ওঠে কি না সন্দেহ। কিন্তু সত্যপ্রিয়ের দৃষ্টিতে যে ভাষা তার স্পষ্ট চোখে পড়িয়াছে ভূত দেখার চেয়ে তা চমকপ্রদ। ধনঞ্জয়ের চোখে একদিন যশোদা এ ভাষা দেখিয়াছিল, তবে সত্যপ্রিয়ের চোখের এমন বিশ্বগ্রাসী মারাত্মক ক্ষুধার সঙ্গে ধনঞ্জয়ের সেই মৃদু কামনার অভিব্যক্তির তুলনাই হয় না। হঠাৎ যশোদার একটা অদ্ভুত ধরনের লজ্জা বোধ হয়, অনেকদিন সে-রকম লজ্জার সঙ্গে তার পরিচয় ঘুচিয়া গিয়াছিল।”

 চোখের সেই অস্বাভাবিক দীপ্তিতে দেহের কামনা ছিল না; এবং এর মুখে দাঁড়িয়ে পাঠক যে বিপন্ন বিস্ময় অনুভব করে তাতে সহরতলীর উপন্যাসের অনেক দুর্বলতার দাম মিটে যায়।

॥ প্রতিবিম্ব॥

 প্রতিবিম্বর আকার ছোট। প্রকৃতি নিটোল। সহরতলীর শিথিল বিকেন্দ্রীকরণ এখানে নেই। যুদ্ধের অফিসে - জীবনযুদ্ধের বলতে ক্ষতি কি - তারকের একটা