পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ইণ্টারভিউ গল্পের সুনির্দিষ্ট বিষয়। হিটলার-বিরোধী যুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগ দেওয়া আয়ত্তপ্রায় ছিল। স্বেচ্ছায় তা মুষ্টিচ্যুত করতে হলো। সমাজতন্ত্রের মহত্তর যুদ্ধে শ্রেণীসংগ্রামে শ্রমিকশ্রেণীর পাটিতে দুর্লভ প্রবেশাধিকারও অবাধ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তাও প্রত্যাখ্যাত হল। তারক খুঁজছিল জীবিকা আর জীবনের সত্য।

 গ্রাম থেকে কলিকাতায় এসেছে তারক। পার্টি কমিউনে কিছুকাল কাটাল। গ্রামের কর্মগুরু রামবাবুর উদ্দেশ্য ছিল তাকে এর মধ্য দিয়ে পাটির ভেতরে টেনে নেওয়া। শ্বশুর আর স্ত্রীর গরজ ছিল তার চাকরিতে ঢুকে পড়ায়। তারক ইণ্টারভিউ দিয়েছিল। উভয়ত স্বেচ্ছাকৃত বিফলতা নিয়ে সে প্রত্যাবর্তন করেছে তার গ্রামে। অবশ্যই তারকের কোনো মহৎ যন্ত্রণ নেই - জিজ্ঞাসাও। কিন্তু একটা বিশিষ্ট মনুষ্যত্ব আছে যা একেবারে সাধারণের কাঠামোয় ধৃত। নেশা হলে সে কর্মে উৎসাহী, পেশা হলে আতঙ্কিত। চাকরির ফাঁদে সে পড়ে নি, পাটির জালেও নয়। পৃথিবীর নিয়মকানুনের অনেক স্বতঃসিদ্ধ তার চরিত্রের বাইরের সীমা পর্যন্ত মাত্র পৌঁছতে পেরেছে। স্বেচ্ছাচার তার রক্তে অথচ উচ্ছৃঙ্খলতা নেই কোথাও। বিদ্রোহের উচ্চকণ্ঠে তার প্রবৃত্তি নেই। বন্ধনভীরু স্বভাবের প্রতি রক্তকণিকায় স্বাধীন ব্যাক্তিত্ত্ব। সেই স্বাতন্ত্র্য কোনো সামাজিক বিদ্রোহে উচ্চকণ্ঠ নয়। প্রায় অনুচ্চার আত্মকেন্দ্রিক। কখনও পলায়নপর। কোনো তটস্থ দার্শনিকের কর্মবিমুখ চিত্তের উদঘাটন লক্ষ্য নয় এক্ষেত্রে - জীবনযুদ্ধে ভগ্নবিকৃত প্রাণ সে নয়। সহজ সুস্থ জীবন বিষয়ে আগ্রহী এবং বিরূপও, যদিও তিক্ততা নেই। অর্থাৎ সে প্রান্তবাসী।

 প্রতিবিম্ব উপন্যাসে মাণিকবাবু রাজনীতির দলের মত ও মতের তর্ক তুলেছেন। ঔপন্যাসিকের শিল্পীমনের বিবর্তনে এর ভূমিকা তুচ্ছ নয়। তাঁর উপলব্ধির উত্তর কোটিতে যে বিশিষ্ট রাজনৈতিক প্রত্যয় প্রাধান্য বিস্তার করেছিল তার আবির্ভাব ও পরিণতির একটি আভ্যন্তর ইতিহাস আছে। সহরতলী উপন্যাসে দেখা গেছে শ্রমিকদের প্রতি ঔপন্যাসিকের এক ধরনের প্রীতির আকর্ষণ - ধনপতির শোষণ কৌশলের মর্মচ্ছেদও। অবশ্য ঠিক কমিউনিস্ট পার্টি বা কোনো বিশিষ্ট মতবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সে-ভাবনা বিস্তার লাভ করে নি। আবার প্রতবিম্বে সংগ্রামী শ্রমিক-কৃষকেরা নেই বটে তবে পাটির ভেতরে

১০