পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

বিষয়ে কারো কাছে যেন আর নত হওয়া যায় না। আর বকুলকে এমন ভাবে হঠাৎ বনগাঁয়ে পাঠাইয়াও দিয়াছে তো এই কারণে, মেয়ের উপর অধিকার জাহির করিতে। কাজটা যে বাড়াবাড়ি হইয়া গিয়াছে, ওরা রওনা হইয়া যাওয়ার পরেই শ্যামার তাহা খেয়াল হইয়াছে।

 শীতল কিন্তু আজ চেঁচামেচি গালাগালি করিল না, করিলে ভাল হইত, ছড়ি দিয়া শ্যামাকে অমন করিয়া হয়তো সে তাহা হইলে মারিত না। মাথায় ছিটওলা মানুষ, যখন যা করে একেবারে চরম করিয়া ছাড়ে। শ্যামার গায়ে ছড়ির দাগ কাটিয়া কাটিয়া বসিয়া গেল।

 মারিয়া শীতল বলিল — বজ্জাত মাগী, তোকে আমি কী শাস্তি দিই দেখ। এই গেল এক নম্বর। দু নম্বর শাস্তি তুই জন্মে ভুলবি না।

 শাস্তি? আবার কি শাস্তি শীতল তাহাকে দিবে? তাহার স্বামী?

 বিবাহের পরেই শ্যামা টের পাইয়াছিল শীতলের মাথায় ছিট আছে। পাগলের কাণ্ডকারখানা কিছু বুঝিবার উপায় নাই। পরদিন দশটার সময় নিয়মিতভাবে স্নানাহার শেষ করিয়া শীতল আপিসে গেল। বারটা একটার সময় ফিরিয়া আসিল। শ্যামাকে আড়ালে ডাকিয়া তাহার হাতে দিল একতাড়া নোট। শ্যামা শুনিয়া দেখিল, এক হাজার টাকা। এ কেমন শাস্তি? শীতল কি করিয়াছে, কি করিতে চায়?

 — এ কিসের টাকা?— শ্যামা রুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞাসা করিল।

 শীতল বলিল — বাবু বোনাস দিয়েছেন। পরশু লাভের হিসাব হল কিনা, ঢের টাকা লাভ হয়েছে এবছর, আমার জন্যেই তো সব? তাই আমাকে এটা বোনাস দিয়েছেন।

 এত টাকা! হাজার! আনন্দে শ্যামার নাচিতে ইচ্ছা হইতেছিল। সে বলিল, বাবু তো লোক বড় ভাল?— হ্যাঁগা, কাল বড্ড রেগেছিলে না? বড় মেরেছিলে বাবু কাল — পাষাণের মতো। ভাগ্যে কেউ টের পায় নি, নইলে কি ভাবত। আপিস যাবে নাকি আবার?

 — যাই, কাজ পড়ে আছে। সাবধানে রেখো টাকা।

 এই বলিয়া সেই যে শীতল গেল, আর আসিল না। দুদিন পরে মামা বনগাঁ হইতে একা ফিরিয়া আসিল।

 — বুকু কই মামা?— শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল।

৯০