পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী

 মামা বলিল — কেন, শীতলের সঙ্গে আসে নি? শীতল যে তাকে নিয়ে এল?

 তখন সমস্ত বুঝিতে পারিয়া শ্যামা কপাল চাপড়াইয়া বলিল, আমার সর্বনাশ হয়েছে মামা।

 কে জানিত, পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে চারটি সন্তানের জননী শ্যামার জীবনে এমন নাটকীয় ব্যাপার ঘটিবে?



পাঁচ


 বকুলকে সঙ্গে করিয়া শীতল চলিয়া গিয়াছে।

 ফিরিয়া যদি সে না আসে, এ শাস্তি শ্যামা সত্যই জীবনে কখনো ভুলিবে না।

 মামা বলিল — অত ভাবছিস কেন বল দিকি শ্যামা, রাগের মাথায় গেছে, রাগ পড়লে ফিরে আসবে। সংসারী মানুষ চাকরি-বাকরি ছেড়ে যাবে কোথা? আর ও-মেয়ে সামলানো কি তার কম্মো? দুদিনে হয়রান হয়ে ফিরতে পথ পাবে না।

 শ্যামা বলিল — কি কাণ্ড করে গেছে মামা, সে-ই জানে। কাল অসময়ে আপিস থেকে ফিরে আমায় হাজার টাকার নোট দিয়ে গেল। বললে — আপিস থেকে বোনাস দিয়েছে। কাল তো বুঝতে পারি নি মামা, হঠাৎ এত টাকা বোনাস দিতে যাবে কেন, লাভের যা কমিশন পাবার সে তো ও পায়?

 শ্যামার কিছু ভাল লাগে না, বুকের মধ্যে কি রকম করিতে থাকে, কিসে যেন চাপিয়া ধরিয়াছে বুকটা। কাজ করিয়া করিয়া এমন অভ্যাস হইয়া গিয়াছে যে অন্য মনে কলের মতো তাহা করিয়া ফেলা যায় তাই, না হইলে শ্যামা আজ শুইয়া থাকিত, সংসার হইত অচল। ন’টার সময় মিন্ত্রিরা কাজ করিতে আসিল, ঘর প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, আর সাত দিনের মধ্যে ঘর ব্যবহার করা চলিবে। বিধান খাইয়া স্কুলে গেল। মামাও সকাল সকাল খাইয়া, ‘দেখি একটু খোঁজ করে’, বলিয়া চলিয়া গেল। বাড়িতে রহিল শুধু শ্যামা আর তাহার দুই শিশুপুত্র, মণি ও ছোটখোকা,— যার নাম ফণীন্দ্র রাখা ঠিক হইয়াছে।

 দুপুরবেলা প্রেসের একজন কর্মচারীর সঙ্গে শীতলের মনিব কমলবাবু আসিলেন।

৯১