পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প পাকিয়ে উঠে মাথার মধ্যে সব ঝাপসা করে রেখেছে, কী করা উচিত। তার জবাব কোথায়, কে জানে। ভাবতে গেলে মাথার বদলে কেশবের শরীরটাই যেন বিমঝিম করে। এ গায়ের রাখালের বোন আর দীনেশের মেয়ে এভাবে বিক্রী হয়েছিল। কালাটাদের কাছে নয়, অন্য দু'জন ভিন্ন লোকের কাছে। তবু তো শেষ পৰ্য্যন্ত রাখাল বঁাচতে পারেনি। ঘরে মরে পাচে সে চারিদিকে দুৰ্গন্ধ ছড়িয়েছে। দীনেশও তার পরিবারের বাড়তি পড়তি মানুষ কটাকে নিয়ে কোথায় যেন পাড়ি দিয়েছে তার ঠিকানা নেই। তাছাড়া ওরা কেউ বামুন নয়। ঠিক কেশবের মতো ভদ্রও নয়। শূদ্ৰজাতীয় সাধারণ গোরস্থ মানুষ। ওরা যা পেরেছে কেশবের কি তা পারা উচিত ? বুকটা ধড়ফড় করে কেশবের। তার মৃতদেহের নাড়ী সচল হয়। তালাধরা কাণে শঙ্খ ঘণ্টা সংস্কৃত শব্দের গুঞ্জন শোনে, চুলকানি ভরা ত্বকে স্নান ও তসরের স্পর্শ পায়, পচা মড়ার স্মৃতিভ্ৰষ্ট নাকে ফুল চন্দনের গন্ধ লাগে । বন্ধ করা চোখের সামনে এলেমেলে উল্টোপাল্টাভাবে ভেসে আসে ছাতনাতলা, যজ্ঞাগ্নি, দানসামগ্ৰী, চেলিপির শৈল, সারি সায়ি মানুষের সামনে সারি সারি কলাপাতা । মনে যেন পড়তে থাকে। সে শৈলের বাপ । কচুশাক দিয়ে ফ্যানভাত দু'টি খাওয়ার সময় সারি সারি লোকের সম্মুখে সারি সারি কলাপাতা দেওয়ার জন্য আলগা DDBD BHBDB DB BDD DDLD BDDBDBD DDBDBB DBB ও সান্নিধ্য যেন কেশবের নিশ্বাসকে চিরকালের মতো টেনে নিয়ে দ্রুত উপে যায়। কে কার বাপ সেটা \অগ্রাহ করার পক্ষে তাই আবার হয় যথেষ্ট । শৈলীর মা বিনায়, কঁদে না। বিমায় আর গুণগুণানো গানের সুরে বিনায়। শুনলে মনে হয়। ঘরে বুঝি ভ্রমর আসছে। শৈলীর শ্রবণশক্তি তীক্ষু বলে সে মাঝে মাঝে কথাগুলি শুনতে KESDBK DBDD DD DSS BBB BDB SDBBD DDD BBDS ভাইকে খেলি, বোনকে খেলি, নিজেকে খেতে পারলিনে পোড়ারমুখী। মাির তুই মর। কলকাতায় যাবার আগে মর। শৈলর রসকল শুকিয়ে গিয়েছে। মনে তার দুঃখবেদনা মান অভিমান কিছুই জাগে না। খিদের বালাইও যেন তার নেই। কালাচাঁদের সঙ্গে যেখানে হোক গিয়ে দু'বেলা পেট ভরে খাওয়ার কথা ভাবলে তার শুধু ঘন ঘন রোমাঞ্চ হয়। তার নারীদেহের সহজ ধৰ্ম্ম রক্তমাংসের আশ্ৰয় ছেড়ে শিরায় গিয়ে ঠেকেছে। প্যাচড়া চুলকিয়ে সুখ হয় না ; রক্ত বার হলে ব্যথা লাগে না। অথচ পেট মোটা ছোট ভাইটার কঁচা পেয়ারা চিবানো পৰ্য্যন্ত তার কাছে রোমাঞ্চকর ঠেকে। বুধবার সকালে পরিষ্কার রোদ উঠে দুপুরে মেঘলা করে, বিকালে আবার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। মধ্যাহে সদয় ডাক্তারের নাতির মুখেভাতে কেশব চক্ৰবৰ্ত্তীর বাড়ী শুদ্ধ সকলের নিমন্ত্রণ ছিল। কুঞ্জ শানাইওলা তার সঙ্গী আর ছেলে নিয়ে আশেপাশের কয়েকটা গ্রামের বিয়ে পৈতে Σ δO মুখেভাতে চিরকাল শান্নাই বাজিয়ে এসেছে। তার অবৰ্ত্তমানে সদয়কে শানাইওয়ালা আনতে হয়েছে সদর হতে। সপরিাবারে নিমন্ত্রণ রেখে কোনমতে বাড়ী এসে কেশব সপরিৰারে মাদুরের বিছানায় এলিয়ে পড়ল। পেট ভরে খেলে যে মানুষের এরকম দম আটকে মরণব্দশা হয় এটা তারা জীবনে আজ টের পেল প্ৰথম । সন্ধ্যা পৰ্যন্ত তারা এমনিভাবে অৰ্দ্ধচেতন অবস্থায় পড়ে রইল, যেন জ্ঞানহারা মাতালের ঘুমাচ্ছে। পথে একবার এবং বাড়ীতে কয়েকবার বমি করায় শৈলর ঘুমটাই কেবল হল অনেকটা স্বাভাবিক। কেশবের পেটে যন্ত্রণা আরম্ভ হওয়ায় সেই কাছে বসে তার পেটে খালি হাত মালিশ করে দিতে লাগল। বাড়ীতে তেল ছিল না । ” পেটের ব্যথা কমতে রাত হয়ে গেল, কেশবের তখন মানসিক সংস্কারগুলি ব্যথায় টনটন করছে। কালাচাঁদ এল অনেক পরে, রাত্রি তখন গভীর। পাড়ার খানিক তফাতে নির্জনে গাড়ী রেখে সে একজন লোক সঙ্গে করে এসেছে। শুধু এ পাড়া নয়, সমস্ত গ্রাম ঘুমে নিঝুম। কেবল কেশৰোঁর মনে হচ্ছিল অনেক দূরে সদয় ডাক্তারের বাড়ীতে যেন তখনো অস্পষ্ট সুরে শানাই বাজছে। কেশব কেঁদে বলল, “ও বাবা কালাচাদি ।” “elfs “এমনিভাবে মেয়েকে আমার কেমন করে যেতে দেৰী, আমার বিয়ের যুগ্যি মেয়ে ?” “এই তো দোষ আপনাদের। আমাকে বিশ্বাস হয় না ? বলুন তবে কী করব। মালপত্র গাড়ীতে আছে। তিন <Rg|15te-” কেশব চুপ করে থাকে। টর্চের আলোয় কালাচাঁদ একবার তার মুখ দেখে নেয়। চোখ দেখে নেয়। চোখ ঝলসানো আলোয় বুনো পশুর চোখের মতো কেশবের জলভরা চোখ জলজল করতে থাকে, পলক পড়ে না। খানিক অপেক্ষা করে কালাচাঁদ বলে, "চটপট করাই ভাল। এই কাপড় জামা এনেছি, শৈলকে পরে নিতে বলুন। মালপত্র আনতে পাঠাই চকোক্তি মশায় ?” কেশব অস্ফুটম্বরে সায় দেয় না বারণ করে স্পষ্ট বুঝা যায় না। শৈলর মা আরেকটি স্পষ্টভাবে বিনায়। কালাচাঁদ সঙ্গের লোকটিকে হুকুম দেয়, মালগুলো সব আনগে। ষা বন্ডি ওঘেদ নিয়ে। ড্রাইভারকে বলিস যেন গাড়ীতে বসে থাকে।” মেঝে লক্ষ্য করে কালাচাদি টািৰ্চটা জেলে রাখে। অন্ধকারে তার গা ছমছম করছিল। বিচ্ছরিত আলোয় ঘরে রঙ্গমঞ্চের নাটকীয় স্তব্ধতার থমথমে বিকার সৃষ্টি হয় । কেশব উবু হয়ে বসেছে, তার হাতে শৈলর জন্য আনা রঙীন সাড়ী, সায়া ও ব্লাউজ। ঠিক পিছনে দাড়িয়ে আছে শৈল । “একটা তবে অনুমতি কয় বাবা।”