পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অহিংসা bs অনেক খোঁজাখুজি করিয়াও তার দেখা না পাইয়া মহেশ চৌধুরী অবশ্য বুঝিতে পারিল যে, নদীর দিকের খিড়কি দরজা দিয়া সদানন্দ কুটীরে ফিরিয়া গিয়াছে, কিন্তু নিজে সে কুটীরে ঢুকিল না। রত্নাবলীর কুটীরে ফিরিয়া গিয়া মাধবীলতাকে বলিল, ‘ওঁকে একবার ডেকে আন তো মাধু।” মাধবীলতা অবাক ।- "ডেকে আনিব ? এখানে ?” ‘হঁ্যা। বলগে, আমি এক বার দেখা করতে চাই।' মহেশ চৌধুরী হুকুম দিয়া ডাকিয়া আনিয়া দেখা করিবে সদানন্দের সঙ্গে। প্ৰতিবাদ করিতে গিয়া কিছু না বলিয়াই মাধবীলতা চলিয়া গেল। হঠাৎ তার মনে পড়িয়া গিয়াছিল মহেশ চৌধুরীর পাগলামীর মানে বুঝিবার ক্ষমতা এতদিন এক বাড়ীতে থাকিয়াও তার জন্মে নাই। প্ৰায় এক ঘণ্টা পরে, রত্নাবলী যখন ব্যস্ত আর বিব্রত হইয়া বাব বার বলিতে আরম্ভ করিয়াছে যে, তার একবার গিয়া খোজ করিয়া আসা উচিত, মাধবীলতা ফিরিয়া আসিল । সদানন্দ বলিয়া পঠাইয়াছে, দেখা করিবার দরকার থাকিলে মহেশ চৌধুরী যেন সন্ধ্যার পর তার সঙ্গে গিয়া দেখা করিয়া আসে। শুনিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া মহেশ চৌধুরী বলিল, 'চল আমরা ফিরে যাই মাধু।” "সারা দিন। এখানে থাকবেন বলেছিলেন যে ?” 'वांद्र ८५८ कि श्tत्र ? (उररश्त्रिांभ भांशष} বুঝি হঠাৎ বদলে গেছে, কিন্তু মানুষ কি কখনো বদলায় ?” মানুষ যে বদলায় না, তার আরেকটা মস্ত বড় KK KLD BBDS BBS KEE DDD গ্রামের কাছাকাছি মস্ত একটা মাঠে পাঁচশ ত্রিশ জন অৰ্দ্ধ-উলঙ্গ নোংরা মানুষকে আত্মহত্যা করিতে বিভূতি নিষেধ করিতেছে। মুখে ফেণা তুলিয়া এমনভাবে নিষেধ করিতেছে যেন কোন রকমে এই লক্ষ্মীছাড়া বোকা মানুযগুলোকে কথাটা একবার বুঝাইয়া দিতে পারিলেই তারা হত্যা করিবে তৰু আর এভাবে আত্মহত্যা করিবে না। একসঙ্গে খাইতে বসিয়া মহেশ চৌধুরী সোজসুজি জিজ্ঞাসা করিল, “আবার কি তুমি জেলে যেতে চাও?’ "সাধ করে কেউ জেলে যায় ?” বিভূতির মেজাজটা তাল ছিল না। ‘অমন করে ওদের ক্ষেপিয়ে তুললে জেলেই তো যেতে হয় বাবা ? একটু কিছু ঘটলেই তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে।” 及哥一>& 'নেয় নেবে।” মহেশ চৌধুৰী [ডালমাখা ভাত খায় আর ভাবে । বুঝাইয়া কোন লাভ হইবে না। এই কথাটাই অনেকবার অনেক ভাবে ছেলেকে সে বুঝাইয়াছে যে, অকারণে জেলে গিয়া কোন লাভ হয় না, সেটা নিছক বোকামি-কাজের মত কোন কাজ করিয়া ছেলে তার হাজার বার জেলে যাক, হাজার বছরের জন্য জেলে যাক, মহেশ চৌধুরীর তাতে তো কোন আপত্তি নাই । কিন্তু পাহাড়ে উঠবার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে বাপ দেওয়ার মত দেশ আর দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য চোখ কাণ বুজিয়া জেলে যাওয়ার তো কোন অর্থ হয় না। মনে হইয়াছিল, বিভূতি বুঝি কথাটা বুঝিতে পারিয়াছে -বিভূতি চুপচাপ শুনিয়া গিয়াছে, তর্কও করে নাই, নিজের মতামত জাহির করিবার চেষ্টাও করে নাই। আজ আবার মহেশ চৌধুরীর মনে হইতে লাগিল, অনেক দিন পরে বাড়ী ফিরিয়া সে শুধু বাপের সঙ্গে কথা কাটাকাটি এড়াইয়া চলিয়াছিল, কথাগুলি তার মাথায় ঢোকে নাই। একবার ঢোক গিলিয়া মহেশ চৌধুরী এক চুমুকে জলের গ্লাসটা প্ৰায় অৰ্দ্ধেক খালি করিয়া ফেলিল। ছেলেও। যদি তার সহজ সরল কথা না বুঝিয়া থাকে অথবা এসব কথা বুঝিবার নয় ? মানুষ যা করিতে চায় তাই করে ? অল্প দূরে মহেশের পোষ্যমান বিড়ালটি ঘপটি মারিয়া বসিয়াছিল। মাছের ঝোল পরিবেশন করিতে আসিবার সময় বেচারীর লেজে কি করিয়া মাধবীলতার পা পড়িয়া গেল কে জানে, চমক দেওয়া আওয়াজের সঙ্গে লাফাইয়া উঠিয়া মাধবীলতার নতুন সাড়ীখানা আঁচড়াইয়া ছিড়িয়া দিল। মাছের ঝোলের থালাটি মাটিতে পড়িয়া গেল, বিড়ালটির মতই বিদ্যুৎগতিতে লাফ দিয়া পিছু হটতে গিয়া মাধবীলতা ধপাস করিয়া মেঝেতে পড়িয়া গেলা-পা ছড়াইয়া বসিবার ভঙ্গিতে। গায়ে তার আঁচড় লাগে নাই, পড়িয়া গিয়াও বিশেষ ব্যথা লাগে নাই, কিন্তু চীৎকার শুনিয়া মনে হইল তাকে বুঝি বাঘে ধরিয়াছে। কাঠের মোটা একটা পিাড়ি কাছেই পড়িয়াছিল, দুহাতে পিাড়িটা তুলিয়া নিয়া এমন জোরেই বিভূতি বিড়ালটিকে মারিয়া বসিল যে, মরিবার আগে একটা আওয়াজ করার সময়ও বেচারীর জুটিল না।