পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्। लून colा ए। ‘কেঁদেছিল বৈকি। আমি কি তোমায় মিথ্যে বলছি সুমতি ?” অক্ষয় সিড়ি দিয়া নামিয়া গেল। সুমতি ভাবিতে লাগিল সকাল বেলা চিঠির তাড়া খুজিয়া পাওয়ার প্রতিক্রিয়াটা যে অক্ষয়ের দিক হইতে প্ৰতিশোধের রূপ নিয়া আসিবে এ তাহার জানিয়া রাখা উচিত ছিল । নন্দর মত অক্ষয় ছেলেমানুষ নয়। অলকা তাহাকে প্রচুর নারী-অভিজ্ঞতা দিয়া গিয়াছে। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অক্ষয়কে তাহা কাজে লাগাইতেই হয়। সে রাত্রির অপমানে রাগ করিয়া থাকার সুযোগ নন্দ পাইল না। কারণ সুমতি তাহার উত্তেজনার জোরালো প্ৰতিষেধক দিয়া গেলেও পরদিন তাহার ভালমতেই জ্বর আসিল। মাথা কোলে তুলিয়া না নিলেও সুমতি সারাদিন তাহার মাথায় বরফ দিয়াছিল। সন্ধ্যার পর অক্ষয় নিজেই ওষুধ দিয়া গেল। সুমতির মুখের দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চাহিয়া বলল “এর মধ্যে বিষ আছে, বুঝলে ?” সুমতিও বোধ হয়। সেই প্রকার কিছু অনুমান করিতেছিল, সািভয়ে বলিল 'বিষ' ?” “হ্যা। ভাল করে দাগ দেশে খাইও' সুমতি ছল ছল চোখে বলিল 'বিষ কেন ?” অক্ষয। হঠাৎ হাসিয়া বলিল 'সে তো তোমায় আমি এক কথায় বুঝিয়ে দিতে পাবিব না। ওর যা অসুখ একমাত্র বিষেই তা সারে।” 'একদাগের বেশী পড়লে মরে যাবে ?” 'না, বেশীরকম নেশা হবে। শিশির সমস্ত ওষুদ খেলেও মারবে না, দিন তিনেক নেশায় অজ্ঞান হয়ে থাকবে বড় জোর। ডাক্তার অনেক মানুষ মাবে, কিন্তু ইচ্ছা করে একজনকেও মারে না। সুমতি ।” তা নিশ্চয় মারে না, কিন্তু তাই বলিয়া কি এরূপ মন্তব্য করিবার অধিকার ডাক্তারের জন্মায় ? সুমতির বয়স ত কম। হয় নাই যে ইহাকে হেয়ালি মনে করিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া থাকিবে, কোন জবাব দিবে না। একান্ত অবিচলিত ভাবেই সুমতি বলিল, “তা বৈকি। কৰ্ত্তব্যের সঙ্গে সব সময় হৃদয়ের যোগ থাকবে তার তো কোন মানে নেই।” অক্ষয় ভ্ৰকুঞ্চিত করিল। সুমতির মুখখানি অনেকক্ষণ নীরবে নিরীক্ষণ করিয়া বলিল “কিন্তু কোনমতে একটা কৰ্ত্তব্যের সঙ্গে হৃদয়ের যোগ ঘটে গেলেই আর সর্ব কৰ্ত্তব্য ভুলিয়ে দেয়।” ইহাও হেঁয়ালি নয়। সুমতি বলিল “তা দেয়, কিন্তু কোন কৰ্ত্তব্যের সঙ্গে কার হৃদয়ের যোগাযোগ ঘটেছে অন্য কৰ্ত্তব্যে অবহেলা দেখেই সব সময় সেটা ধরা যায় না। কৰ্ত্তব্যের তো ছোট বড় আছে। So O ওষুধের শিশি হাতে আকাশের সন্ধ্যার নীচে উঠানে দাড়াইয়া এমন করিয়া আত্মসমর্থনা করিতে সুমতির গলা বুজিয়া আসিতেছিল। অথচ এ সমস্ত অক্ষয়কে জানানো প্ৰয়োজন । হৃদয়ের হিসাব-নিকাশ যে চিরকালের মত সে চুকাইয়া ফেলিয়াছে অক্ষয়কে ইহা বিশ্বাস করাইতে না পারিলে তাহার আর উপায় নাই । বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা টাকার কাছে হার মানিতে পারে -একটি মরণাপন্ন শাসিালে রোগীর জীবন মরণের ভার নিতে অক্ষয় আপত্তি করে নাই । রাত বারোটা অবধি তাহাকে বাচাইবাব চেষ্টা করিয়া অক্ষয় বাড়ী ফিরিতেছিল। দারোয়ান প্রভুর প্রতীক্ষায় দুলিতে ঢলিতে রামায়ণ পাঠ করিতেছিল, সেই অক্ষয়কে দরজা খুলিয়া দিল। নন্দর ঘরের সামনে দিরা অন্দরে যাইবার পথ। ঘরে আলো জ্বলিতেছিল, দরজা খোলা। জেলখানার আধা ঘুমন্ত শাস্ত্রীর মত বুকে চি2ক ঠেকাইয়া ন - লম্বালম্বি ঘরটা পবিক্ৰমণ করিতেছিল, গতি অত্যন্ত মন্থর, যে কোন মুহূৰ্ত্তে ঘুমাইয়৷ পড়িয়া মেবোর উপর ঢলিযা পড়া যেন আশ্চৰ্য্য নয়। মেঝেতে লাঠি ঠুকিয়া অক্ষয় বলিল “তুমি যে যাওনি হে ?” नन तैigाईल । “না, যাইনি।” "কেন ? যাওনি কেন ?” "একটু দবকার ছিল তাই যাইনি। কাল যাব।” অক্ষয। শুষ্ক কণ্ঠে বলিল “কাল যাবে, কাল !-কাল আমার নতুন কম্পাউণ্ডার আসবে সকালবেলা, সে কোথায় থাকবে শুনি ?” “সে আসবার আগেই আমি যাব অক্ষয়বাল্‌ ৷” অক্ষয় বিবক্ত হইয়া বলিল “আমার মাইনে করা কম্পাউণ্ডার আমায অক্ষয়বাপু বলে এ আমি পছন্দ করি না নন্দ | চিৰকাল ডাক্তারবাবু বলে এসেছে, যাবার আগে আজ অকারণে একটা মনোমালিন্যেৰ সৃষ্টি কোরো না । তা তুমি ঘরের মধ্যে এত রাত্রে পাক খাচ্ছে কেন ?” নন্দ ক্ষীণভাবে হাসিবার চেষ্টা কবিয়া বলিল ‘পবিশ্রম করছি। ঘুম আসে না ডাক্তার বাবা।” ‘কোথাও যাবার সময় এরকম হয়' বলিয়া অক্ষয় অন্দরের দিকে পা বাড়াইল । সিডিটা অন্ধকার-নিবিড় জমাট অন্ধকার । অক্ষয়ের চোখ যেন অন্ধ হইয়া গেল। কিন্তু সুইচের অবস্থান জানা সত্বেও আলো সে জালিল না । বরং সিড়ির মাঝামাঝি উঠিয়া অন্ধকারে ক্ষণিক দাড়াইয়া রহিল। অক্ষয়ের ঘরে আলো জ্বলিতেছিল। দুয়ারের সামনে পুৱা পাঁচ মিনিট কাল দাড়াইয়া আলোটা চোখে না। সহাইয়া সে ঘরে ঢুকিতে পারিল না। কাল যে আহাৰ্য্য আগলাইয়া