পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S) O 8 মানিক গ্রন্থাবলী সব বৃত্তান্ত শুনে অরুণা তার রোগ করা মোটা দেহটি সোফায় এলিয়ে দিয়ে গভীর হতাশার সঙ্গে বলে, “তুমি একটা পাগল, তুমি একটা ছাগল। তুমি কোনদিন কিছু করতে পারবে না।” “আমি কি করব ? বসন্তবাবু গেলেন না - * অরুণা ফোস করে ওঠে। মনের জ্বালায়, "বসন্তবাবু যে গেলেন না, সেটা যে তোমার কত বড় সুযোগ একবার খেয়ালও হল না তোমার ? একবার মনেও হল না। এই সুযোগে একটু চেষ্টা করলে এক রাত্রে তুমি নেতা হয়ে যেতে পাের ? একেবারে ফাকা ফিল্ম পেলে, কেই তোমার কম্পিটিটর নেই, আর তুমি কিছু • করেই চলে এলে? তুমি সত্যি পাগল। সত্যি তুমি ছাগল। তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না, কোনদিন কিছু হবে না।” “আমার কি করার ছিল ?” “আমি বলে দেব তোমার কি করার ছিল ?” ফুসতে থাকে। অরুণা ক্ষোভে দুঃখে, “তুমি না। দশ বছর পলিটিক্স করছি ? তুমি না। সব জানো সব বোঝ, অন্যে তোমার বুদ্ধি ভাঙ্গিয়ে খায় ? একবার উঠতে পারলে সারা দেশটাকে মুখের কথায় ওঠাতে বসাতে পার ? আমার কাছে যত তোমার লম্বা-চওড়া কথা, বন গায়ে শ্যাল রাজা । সবাই ওঁকে দাবিয়ে রাখে। তাই উনি উঠতে পারলেন না, নামকরাদের র্তাবেদার হয়ে রইলেন। নিজের বুদ্ধি নেই, ক্ষমতা নেই, অন্যের দোষ।” অমৃতের ফাপর ফাপর লাগে, দশ বছরের বিফলতা বাতাসকে যেন ভারি করে দিয়েছে মনে হয়। কতভাবে কত চেষ্টা করল, কত চাল কত কৌশল খাটাল, মরিয়া হয়ে কত আশায় জেলে গেল, কিন্তু না হল নাম, না জুটল। প্রভাব প্ৰতিপত্তি, বড় নেতা হওয়ার সৌভাগ্যও হল না। এতদিনে। পাণ্ডাদের সঙ্গে মিলতে মিশতে, পায়, সাধারণ বৈঠকে যোগ দিয়ে কথা বলতে পায়, সভায় মঞ্চে দাডিয়ে দু’চার মিনিট বলতেও পায়—তেমন সভা হলে বেশী ক্ষণ । পরদিন খবরের কাগজ কেনে অনেকগুলি, সাগ্রহে সভার বিবরণ পাঠ করে নিজের নাম খুজে পায় না কোথাও । যদি বা পায়, সে শুধু আরও নামের সঙ্গে উল্লেখ মাত্র। অরুণার সঙ্গে তর্ক বৃথা । কিন্তু কিছু তাকে বলতেই হবে, না বলে উপায় নেই। ‘কথাটা তুমি বুঝছে না, অমৃত বলে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে, পাণ্ডারা যা ঠিক করলেন তার বিরুদ্ধে কি যাওয়া যায় ? আমার নিজের করতে যাওয়া মানেই ওঁদের বিরোধিতা করা। ওঁরা চটে যাবেন না। তাতে ? আমাকেই