পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se মানিক গ্ৰন্থাবলী গেটে বঁাশ শুধু দোল খায় নিশ্চিন্ত মনে। জীবনের ঝড়-ঝাপটা তাকে কাবু করে দিয়েছে, গণেশের মা ঠিক আছে তার নিজের মতিগতি বজায় রেখে। নইলে এত সব ভয়ানক বিপৰ্যয় কাণ্ডের পর, ঘর-বাড়ি ছেড়ে পরের আশ্রয়ে এসে রাতারাতি শহরের উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্ট যাত্রায় প্রতীক্ষা করার সময়, তাকে কঁথার নীচে ঢুকিয়ে একটু আরাম আর বিশ্রাম দেওয়াবার জন্য এত চালের কথা কইতে পারত গণেশের মা। সব ব্যাপারের মোটামুটি মানেটা বুঝেই গণেশের মা নিশ্চিন্ত । মেয়েকে তার জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ব্যারাকে, গায়ের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপে গিয়ে মেয়েকে তার উদ্ধার করে এনেছে, ব্যারাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, রাতারাতি তাদের সরিয়ে এনে ফেলেছে এখানে শহরে গণেশের কাছে পাঠিয়ে দেবার জন্য, এই পৰ্যন্ত জেনে গণেশের মা কঁাদাকাটা হা-হুতাশ বাতিল করেছে। কত যে আরও ফ্যাকড়া আছে ও ব্যাপারে, সেটা তার খেয়াল নেই। এ ব্যাপারের জের যে কোথায় গড়াবে, কেন যে তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাতারাতি, কত হাঙ্গামা কত দুর্দশ যে জমা হয়ে আছে তাদের জন্য সামনের দিনগুলিতে, যে সব কথা মাথায় আসে না। ওর। শহরে গিয়ে ছেলের কাছে গিয়ে থাকবে ভেবেই সে খুশী, তার রোজগেরে ছেলে । মাসে মাসে টাকা পাঠাচ্ছে ছেলে, সে থাকতে ভাবনা কি তাদের ? “এখনো জ্বলছে বাবা আগুন । দাউদাউ করে জলছে।” রাণী হঠাৎ বলে মুখ না ফিরিয়েই । “তুই তো একটু শুলে পারতিস রাণী ? গণেশের মা বলে আবেগহীন গলায়। এই মেয়েই যে যত ঝঞ্চাট যত বিপাকের মূল এ কথা ভেবে তার কোন জালা নেই। সংসারের আর দশটা ঝঞ্চাটে নয় মেয়ে বলে ওকে গঞ্জনা দেওয়া চলে, এই সৃষ্টিছাড়া ভয়ঙ্কর ব্যাপারে ওকে দায়িক ভাবা কি যায় ? গণেশের মারি অন্য দুশ্চিন্তা । মেয়ে তার খাটিই আছে, কিন্তু লোকে কি তা জানবে না মানবো! কেউ কিছু না বলুক, সবাই দরদ দেখাক, তবু মেয়ে তার ধর্ম নাশের ছাপ মারা হয়ে রইল সকলের কাছে। সুধীর হয় তো মেয়েকে তার নেবে না। এই অজুহাতে। এ সব রাণী কি করে সইবে, অসহ্য হলে ঝোকের মাথায় কি করে বসবে, তাই ভাবে গণেশের মা । সেবার পদীর কচি মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সঁাতরার ক্যাম্পে, সারারাত পদী মেয়ের কান্না শুনেছিল আর পাগলের মতো পাক দিয়েছিল ক্যাম্পের চারিদিকে। সকালে আধমরা মেয়ে নিয়ে পদী গাঁয়ে ফিরলে কি হৈচৈ পড়ে । গিয়েছিল চারিদিকে, কেমন মরিয়া হয়ে উঠেছিল চারদিকের হিন্দু-মুসলমান