পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন Y V99 ‘দও না জুটিয়ে ? মধু হেসে বলে ‘দাঁড়ি কিনতেও পয়সা লাগে বাবা। এক ঘণ্টা ধরে চুল ঘষে দিলাম, দত্তবাড়ির বেঁটা পয়সা দিলে চার আনা। চার আনায় গলায় দেবার দড়ি হয় না। রোজগার বাড়ুক দড়িও জুটিয়ে নেব।” অনন্ত কুরিয়ে কুরিয়ে তাকায় মেয়ের দিকে । তার তাক লেগে যায় নিজের ছেলেমেয়েগুলির রকম দেখে । এত যে তার দুঃখ দুৰ্দশার সংসার, শুধু শুধু অশান্তি আর হতাশা, ওরা কেউ যেন তার অস্তিত্ব মানবে না প্ৰতিজ্ঞা করেছে। লড়াই থামতে না থামতে তাকে বুড়ে বয়সে খেদিয়ে দিল চাকরি থেকে, পড়া ছেড়ে চাকরি নিয়ে দুটো পয়সা আনছে ছেলেটা তাই আধাপেটার হাড়িটা চড়ছে কোনমতে, যে কাপড় পরে আছে মাধুওর দিকে তাকানো যায় না, অজয় যে বেশে আপিস যায় যেন কুলি চাষীর ছেলে, আজ বাদে কাল কি হবে ভেবে বুকের রক্ত তার হিম হয়ে আছে, কিন্তু ওরা যেন গ্ৰাহাঁই করে না কোন কিছু ! আগে যখন আরও সহজে সংসার চলত, অজয়ের পড়া চালানো, মাধুর বিয়ে দেওয়া, এসব ব্যবস্থা একরকম করে করা যাবে মরে বেঁচে এ ভরসা করা চলত, তখন যেন কেমন হতাশ, মনমরা ছিল সকলে, রাগারগি চুলেচুলি কঁদোকাটা অশান্তি লেগেই ছিল ঘরে — এখন আরও শোচনীয় অবস্থায় এসে ভবিষ্যতের সব আশা ভরসা হারিয়ে আধাপেটা খেয়ে ছেড়া কাপড় জামায় দিন চালিয়ে গিয়েও সবাই যেন জীয়ন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেভয় নেই ভাবনা নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে, আমরা সব ঠিক করে নেব, এই ভাব সকলের। মায়ের গঞ্জনায় মাধু একদিন মরতে গিয়েছিল ক্ষুর দিয়ে নিজের গলা কেটে, অজয় গিয়ে সময়মতো না ধরলে সর্বনাশ হয়ে যেত। এখনো গলায় সে দাগ আছে মাধুর। আজকাল গালাগাল গঞ্জনা উপহাস কিছুই সে গায়ে মাখে না । রাগ তো করেই না, হেসে উড়িয়ে দেয় । অথচ আজ ওর গায়ে আঁটা আছে এই সত্যটা যে কাপড় ও পরে আছে, ওর দিকে তাকানো যায় না । অনন্ত ঝিমোয়। তার সাধ যায় ছেলেমেয়ের কাছে হার মেনে মাপু চেয়ে বলতে যে এই ভাল ! এই ভাল ? কিন্তু সে চমকে উঠে। গর্জেই বলে, “অজয় ! আপিস যেতে হবে না। আজ আডিডা দিলেই চলবে সারাদিন ? অজয় ভেতরে এসে বলে, ‘আজ আপিস যাব না বাবা। আজ সব আপিস