পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

घ>न्द ঠিক এই অবস্থাতেই ক্রিস্টুপের দিন কাটিতে লাগিল। জীবনটা মনে হইতে লাগিল একঘেয়ে । কয়েকটা মাস কাটিয়া গেল, কোন দিক দিয়া অবস্থার অপ্ৰত্যাশিত কোন পরিবর্তন ঘটিল না; জিভে খারাপ লিভারের স্বাদের মত ক্ৰিষ্টপের মনে জাগিয়া রহিল ভয়ার্ত ব্যাকুলতার বাদ গ্লানি। নিজের আলস্য, অকৰ্মণ্যতা, অপদার্থতা ও অক্ষমতার জন্য অনুতাপের জালা হইলে তার এতটা কষ্ট হইত না । নিজে সে কিছু করিতেছে না, তা যেন নয়। কিছু করিতে পারিতেছে না, তা”ও নয়। কিছু হইতেছে না। কোন এক অজ্ঞাত অকারণে জীবনের কোন এক অনিদিষ্ট অনিয়মে, ব্যর্থতা না ঘটিয়াও সার্থকতার অভাবটা স্থায়ী হইয়া যাইতেছে। আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় নাই। নষ্ট হইলে বোধ হয় डॉलरे হইত- কিছুদিনের জন্য নষ্ট হইলে । আগুনে লোহা পোড়ানোর মত এ বিপদ ছাড়া মানুষের চলে না । ক্রিষ্টপ যে জানে একদিন সে সাফল্য লাভ করিবেই করিবে, এই জানাটাই তাকে ঠাণ্ডা লোহার মত কঠিন করিয়া রাখিয়াছে, নূতন অবস্থার উপযোগী পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ সঞ্চয় করিতে দিতেছে না। আগে নিজেকে নূতন জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ার উপযোগী করিতে না পারিলে, নিজের চেষ্টায় কে নূতন জীবন সৃষ্টি করিতে পারিয়াছে ? কিছু ঘটবে না, এ ভয় ক্রিস্টুপের নাই। কিছু ঘটতেছে না বলিয়৷ ভয়ার্ত ব্যাকুলতার বিশ্ৰী অনুভূতিটাই শুধু সে বোধ করিতেছে, পথ খুঁজিবার তাগিদ পাইতেছে না। এ তো মনের বিলাস ছাড়া আর কিছু নয়। রাজকন্যা ও রাজকুমারের মিলনে রূপকথার শেষ জানিয়াও কাহিনীর মাঝখানে কুমারের বিপদের পর বিপদ ঘটার সময়ে অসহায় ক্ষোভে কাতর হওয়া চলে। নিজের মনের রূপকথায় নিজের এখনকার দুরবস্থায় ক্রিষ্টপ অনায়াসে উদ্বিগ্ন হইতে পারিয়াছে। বেতনের সমস্ত টাকাই ক্রিষ্টপ বাপের হাতে তুলিয়া দেয়, অবিনাশ পঞ্চাশ টাকা রাখিয়া তাকে পঁচিশ টাকা ফেরত দেন। এটা প্রায় নিয়ম দাড়াইয়া গিয়াছে। ক্রিস্টুপের মনটা খুতখুতে করে। হাত-খরচের জন্য অবিনাশ তাকে পঁচিশ টাকা সঙ্গে সঙ্গে ফিরাইয়া দিবেন, কিন্তু সে জানে ওই টাকাটা কাটিয়া রাখিয়া