পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস T e C বাকি বেতনটা সে যদি অবিনাশের হাতে দেয়, একটু তিনি ক্ষুন্ন হইবেন। টাকার পরিমাণের জন্য নয়, তার দরকার আছে জানিলে সব টাকাই তিনি অনায়াসে ফিরাইয়া দিবেন, সন্দেহ নাই; কিন্তু প্ৰথমে তার টাকাগুলি তার হাতে তুলিয়া দেওয়া চাই। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এই ধরণের তুচ্ছ খুতগুলি চিরদিন ক্রিষ্টপকে পীড দেয়। টাকা পয়সা সম্পর্কে আর একটা পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা ক্রিষ্টপ সঞ্চয় করিয়াছে। চাকরী পাওয়ার পর রমেশ বার তিনেক তার কাছে টাকা ধার করিয়াছে। সাহায্য নয়,- ঋণ, পরে শোধ করিবে । শেষবার সে যখন কুড়িটি টাকা ঋণ চাহিল, ত্ৰিষ্টপের হাতে একেবারেই টাকা ছিল না । “বাবার কাছ থেকে চেয়ে দিচ্ছি।” “বাবার কাছ থেকে ? তা” - আমার নাম ক’রো না। কিন্তু ভাই ।” “বাবা তো জিজ্ঞাসা করবেন কি জন্য টাকা চাই ? ‘বলো তোমার নিজের দরকার। নয় তো বলে কোন বন্ধু ধার চেয়েছে। আমার নাম করো না, সে ভারী বিশ্ৰী ব্যাপার হবে ।” রমেশের বেকার অবস্থার জন্য ত্ৰিষ্টপের বিশেষ সহানুভূতি ছিল না। নিজে সে হাতে পাওয়া চাকরী ছাডিয়া দেওয়ার কথা ভাবে, সে বিশ্বাস করিত না যে চেষ্টা করিলে কোন মানুষের পক্ষে দিন চলার মত সামান্য উপাৰ্জন করা অসম্ভব । রমেশের অবস্থার জন্য রমেশকেই যে দায়ী করিয়া রাখিয়াছে। তবু প্রভার স্বামী টাকা যখন চাহিয়াছে, না দিলে চলিবে না । বিরক্তিতে মন ভরিয়া অবিনাশের কাছে টাকা চাহিতে গেল । অবিনাশ বলিলেন, “কুড়ি টাকা ? কি করাবি কুড়ি টাকা দিয়ে ?” ক্রিষ্টপ বলিল, “দরকার আছে।” মা বললেন, “অত খরচে হসনে তিষ্ট।” অবিনাশ বলিলেন, “দরকার আছে জানি । কি দরকার আছে শুনি না ? ক্রিষ্টপ বলিল, “কি দরকার না জানলে টাকা দেবে না ?” অবিনাশের মুখ গভীর হইয়া গেল। আহত বিস্ময়ে তিনি ছেলের মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। মার হাতের কাজ বন্ধ হইয়া গেল'। “টাকা দেব না বলিনি তো, তিষ্ট। টাকা দিয়ে কি করাবি তাই শুধু জিজ্ঞাসা করছিলাম।” ক্রিষ্টপও তা জানে। অবিনাশের শুধু জিজ্ঞাসা, আর কিছু নয়। কুড়ি টাকার