পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস To °) পাঁচিশ টাকার নোট বাছিয়া সামনে ফেলিয়া দিল । '6उांशांद्र bोंक ।' ‘সুন্দ কই ? ক্রিষ্টপ হাসিবার চেষ্টা করিল। এদের বিকৃত অভিমানের পরিচয় তো সে জানে, কিছু জিজ্ঞাসা করিতে ভরসা পাইল না । নোটের তাড়াগুলি আঁচলে বাধিতে বাধিতে প্ৰভা নিজেই বলিল, “চিরকাল কারো সমান যায় না। দু’দিন অবস্থা একটু খারাপ হলে কি রকম যে করে সবাই! সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যেন ফতুর করে দিল ।” প্রভার চোখ জলে ভরিয়া যায়, “মনে থাকবে সব, কত লাথি, ঝাটা অপমান জুটেছে। এতদিন চুপ করে সব সয়েছি, আর তো চুপ করে থাকব না।” লাথি, ঝাঁটা, অপমান। চুপচাপ সব সহ করা। হাসিবে না। কঁদিবে, ক্রিষ্টপ বুঝিতে পারিল না । সারাদিন প্ৰভা সকলের সঙ্গে ঝগড়া করিল। বাপ-মাকে কঁাদাইল এবং নিজেও কঁাদিল । সকলকে সে আঘাত করিতে চায় না, প্ৰমাণ করিতে চায় যে, এতদিন সকলের কাছে তার শুধু অনাদর আর অপমানই জুটিয়াছে। রমেশের চাকরী থাকিলে বাপের বাড়ীতে দিন কাটানোর সময়ে সকলের যে কথা ও ব্যবহার তার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক ঠেকিত, রমেশের চাকরী ছিল না বলিয়াই সেই কথা ও ব্যবহারের মধ্যেই এতকাল কিছু আবিষ্কার করিয়া সে অভিমান করিয়াছে। নিজেই এই বিকারকে সে সমর্থনা করিতে চায় । সেই চেষ্টায় একেবারে হুলস্থূল কাণ্ড বাধাইয়া দিয়া সে রমেশের সঙ্গে চলিয়া গেল । রওনা হওয়ার আগে রমেশ অবিনাশকে বলিল, “আপনার খুব টাকার টানাটানি চলছে শুনছিলাম ?” অবিনাশ বলিলেন, “কই না ? চলে যাচ্ছে এক রকম । তিষ্টির চাকরীটি হয়ে ।” “আমি কিছু টাকা দিলে কি আপনার অপমান হবে ? আমি তো আপনার ছেলের মত ।” অবিনাশের মনে ছিল না ; কিন্তু ত্ৰিষ্টপের এখন মনে পডিয়া গেল, রমেশ টাকা ধার চাহিতে আসিলে, তিনি টাকা ধার দিতে অস্বীকার করিয়াছিলেন । বলিয়াছিলেন, “ধার দিতে পারব না, বাবা । ধার চাওটাও তোমার উচিত হয়নি। তুমি এমনি টাকা নাও। আমার কাছে টাকা নিতে তোমার অপমান কি ? তুমি তো আমার ছেলের মত।” ছেলের মত বলিয়া তাকে ধার দেওয়ার বদলে একেবারে দান করিতে চাওয়ায় রমেশের রাগ হইয়াছিল। এতদিন সেই রাগ মনে পুষিয়া রাখিয়াছে, আজ সেই কাল মিটাইতে চায় ।