পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস RE দিদির বাড়ীতে গিয়া সে কিছুক্ষণ কাটাইয়া আসিবে । মনটা কেমন অশান্ত হইয়া আছে, ওবাড়ীর শান্তিপূর্ণ আবেষ্টনী আর দু'টি শান্ত ও সুখী মানুষের সঙ্গ হয় তো তার মনটাকেও শাস্ত করিয়া দিবে। বাহিরে যাওয়ার আগে ত্ৰিষ্টপ শুনিয়া গেল মা বলিতেছেন, “এত বড় সোমািত্ত রোজগেরে ছেলে, কদিন থেকে বলছি একটা বিয়ে থা দিয়ে দাও- * আর অবিনাশ বলিতেছেন, মেয়ে তো খুঁজছি।-- মেয়ে খুজিতেছে মেয়ে ! তার বাপ তার জন্য মেয়ে খুজিতেছে! এমন হাস্যকর অশ্লীল ঠেকিল কথাটা ত্ৰিষ্টপের কাছে। তার হইয়াছে বয়সকালের রোগ, সেজন্য এই ঔষধ প্রয়োজন। এর বেশী আর কিছু ভাবিয়াছে অবিনাশ ? তার মা ? মেয়ে খুজিয়া আনিয়া দিলে যথানিয়মেই সে প্রিয়া, সাখী, জননী ও গৃহিণী হইবে, এটা জানা কথা । কিন্তু জানা কথাটাও কি মনে পডিয়াছে ওদের ? মেয়ে বলিতে যে মানবজাতীয়া জীব বুঝায়, তাও বোধ হয় খেয়ালে আসে নাই। এই ভাবে কিছু ভাবিতে গেলেই আগে ত্ৰিষ্টপ গভীর জ্বালা বোধ করিত, মনে হইত। মানুষ বড় হীন, জীবনে শুধু ক্লেদ! আজ মৃদু আপসোসের সঙ্গে সে শুধু কৌতুক অনুভব করিল। বাড়ীতে নাই বলিয়াই যে বাজারে সে মেয়ে ভাড়া করিয়াছে, একথা মনে করার জন্য বাড়ীর লোকের উপর রাগ করা চলে না । এরকম করে বৈকি মানুষ, বাড়ীতে বেী থাকিলে পৰ্যন্ত করে, নয়তো ভাড়া করার জন্য এত মেয়ে সংসারে থাকিত না । তাকে মহাপুরুষ মনে করিবার কোন কারণ বাড়ীর লোকের নাই। এটা তার ব্যক্তিগত অপমান নয়। সংসারে এরকম অনুচিত বাস্তবতা থাকাটা মানুষের অপমান। একি ভয়ানক কথা যে যুবকদের চরিত্র সম্বন্ধে মানুষকে সন্ত্রস্ত হইয়া থাকিতে হয়, ধরিয়া রাখিতে হয় যে, গোল্লায় যাওয়াই তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ! এই ব্যাপারটাই ক্ৰিষ্টপের বড় খাপছাড়া মনে হয়। এরকম অভাব মানুষ সৃষ্টি করিয়া রাখিয়াছে কেন, মানুষের স্বভাব যাতে বিগড়াইয়া যায় ? চরিত্র একটা সমস্যা হইয়া দাড়ায় ? তার জন্মের অনেক আগেই এ সব ঠিক করিয়া রাখা উচিত ছিল। এতকাল মানুষ তবে কি করিয়াছে ? একটু ব্রিষ্টপ বুঝিতে পারে যে এসব অভাবের ফল, মাসকাবারের পর আপিসের তিন বন্ধুর ফুতি করার বিকৃত সখা ওই ধরণের বিকার। কিন্তু তার কতখানি অনুগত ৷ আর কতখানি মানসিক অভাব-বােধের চাপ, ঠিক কি ধরণের সেই অভাব এবং তার কারণ কি, এসব সে ধারণা করিয়া উঠিতে পারে না। ত্ৰিফুটুপ ভাবে, অবসর মত দু’চারখানা বই পড়িতে হুইবে এ বিষয়ে ।