পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RR মানিক গ্ৰন্থাবলী পোয়াতি একটা মেয়েছেলের প্রাণ বঁাচাতে একটা ফুড না দিয়ে সে তখন তাকে চটায় নি। কাকার সঙ্গে ভিন্ন হয়েই দুধের বদলে নীলকণ্ঠের কাছ থেকে অতি দরকারী কটা টাকা পেয়ে গৌরাঙ্গ কেনা হয়ে গিয়েছিল। কাল পর্যন্ত সে ধারণাও করতে পারেনি এ কৃতজ্ঞতার তার কারণ নেই, বাবুর দরদ সেরেফ ফাকি । অভিভাবকের, ভালমন্দের দায়িকের ঋণ যেন সে শোধ করছে কাল পর্যন্ত ভোরে উঠে সবার আগে একটুখানি জল মেশানো দুধ পৌছে দিয়ে। হুস করে উপে গেছে সে ভাব তার মনের বিরাগে শুধু নীলকণ্ঠের কালকের অপরাধ নয়, এতদিন ধরে তাকে ঠকানোর অপরাধেরও শোধ নিতে পারছে ভেবে হিংসার সুখে মনপ্ৰাণ তার তাজা হয়ে ওঠে । অনেক লম্পটের শোষণে ছিবরে বন বাজারের মেয়েলোকের মত এ বাড়ীর গিন্নির চেহারা, গলায় মোটা চেন হারটি সোনার শিকলের মত। এতদিন কিছু মনে হয়নি। গৌরাঙ্গের ভদ্রমহিলাকে দেখে মৃদু একটা অস্বস্তিবোধ ছাড়া, আজ বারে বারে তার গরুর কথাটা মনে পড়তে লাগল, যার গলায় হারের মত একটা কুকুর বাধা শিকল জড়ানাে আছে আজ তিন বছর। সবার শেষে গিন্নি থামল। গিন্নি থামা পর্যন্ত ঠায় বসে রইল গৌরাঙ্গ বারান্দার । একপাশে উবু হয়ে। শেষের দিকে একবার তার সাধ হল যে বেয়াদবির পালা সাঙ্গ করে নাকে খত দিয়ে আবেগে গদগদ ভাষায় ক্ষমা চেয়ে জানিয়ে দেয় যে, এমন আর হবে না কোনদিন, ফিরে আবার প্রার্থনা জানায় একটা ফুডের জন্য । কিন্তু সাধ জাগলেও সঙ্কোচের জন্য সেটা গৌরাঙ্গ পেরে ওঠে না। বড় স্পষ্ট হয়ে যাবে তার বজ্জাতির মানে। বড় খাপছাড়া ঠেকবে পরের বৌয়ের জন্য তার এমন ধারা ব্যাকুল হওয়া । হঠাৎ সে যেন দিশে পায় । কেউ যা করে না, মোটেই নিয়ম নয় সংসারের যা করা, সে তো তাই করেছে। হাবার মত খেয়ালের বশে অসঙ্গত কাজ - তার যে সাত পুরুষের কেউ নয়। সেই একটা রোগা ক্যাংটা মেয়েলোকের মরণ বাচন নিয়ে পাগল হয়ে উঠেছে । টের পেলে লোক হাসবে । তাকে ভাববে ছেলেমানুষ, ছ্যাবলা। সকলে হাসি তামাসা করবে, টিটুকারী দেবে। গোবর্ধনের ছেলে কালীচরণ ছিল তার স্যাঙাৎ । বছৰ চারেক আগে কালীচরণ কলেরায় মারা যেতে পৃথিবী শূন্য দেখে শোকে একটু বাড়াবাড়ি রকম কাতর হওয়ার ফলাফল গৌরাঙ্গের মনে পড়ে যায়। শুধু তাকে ভেংগিয়েই সবাই ক্ষান্ত হয়নি, বড়দের পরামর্শে তাকে ধরে বেঁধে জোর করে মাথা ন্যাড়া করে জল ঢালা হয়েছিল কলসী কলসী, মাখিয়ে দেওয়া হয়েছিল মনসা পাতার রস ।