পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RS পারব না। বাবু, আমি কি দোকান খুলে বসেছি ? বিপদ-আপদের জন্য রেখেছি ও দুটো, কখন দরকার হয়।” “আনিয়ে দেবেন। বাবু? “ন-না-না। আমি পারব না।” নীলকণ্ঠ গর্জন করে উঠল। তার রাগ হবার যথেষ্ট কারণ ছিল। রঘু আর গৌরাঙ্গ জানল কেন যে তার বাড়ীতেই দু’টো ফুড আছে ? এ এক দুর্ঘটনা বৈকি! কপালটাই মন্দ রঘুর। বাড়ীর জিনিষ না দিক, নীলকণ্ঠ দয়া করে একটা ফুড আনিয়ে দেবার ভারটা নিশ্চয়ই নিত। কিন্তু রাগ হলে মানুষ কি করে দয়া করে ? ভোরে গৌরাঙ্গ নীলকণ্ঠের বাড়ী দুধ দিতে যায়, গাছের মাথা থেকে রোদ মাটিতে নামার আগে । গায়ের জালায় পরদিন সে অনেক বেলা ক’রে গোল আর এমন জল মেশালে দুধে যে জিনিষটা দাড়িয়ে গেল দুধ মেশানো জল । সময়মত চা না পেয়ে সকলে ক্ষেপে ছিল, হিসাব মত অভ্যর্থনা পেয়ে গৌরাঙ্গ খুসী হল। তার এই প্ৰথম ক্রটিকে সবাই উদার ভাবে ক্ষমা করলে সে বড়ই ক্ষুন্ন হত ! “এত দেবী কবুলি যে বজাত ? ‘দেৱী হয়ে গেল বাবু।” “একি দুধ রে হারামজাদা ? “মেরি দুধ ওমনি বাবু।” নিজেকে বেশ নির্দয় ও নিৰ্ভীক মনে হয় গৌরাঙ্গের, যেটুকু রাগ প্ৰকাশ পাচ্ছে তার চেয়ে বিশগুণ রাগ বাবুদের হয়েছে সন্দেহ নেই। যতটা রাগ চাপা যায় চেপে রেখে শুধু যে বাড়তি অসহ্য রাগটুকুতে বাবু আর তার মাগ-ছেলেরে চোটপাট, একি আর টের পেতে বাকী আছে গৌরাঙ্গের । তাকে ধরে মারতে না পেরে কি কষ্টই না হচ্ছে এনাদের । দুধের বেশ টানাটানি পড়েছে চারিদিকে । গোয়ালার গরু কমেছে, গেরস্তের গরু কমেছে, রোগী গরু আরও রোগ হয়ে দুধ দিচ্ছে কম। কিছু কম দামে প্ৰায় থাটি দুধ তার কাছে এতদিন পাওয়া গেছে, তাকে ছাড়িয়ে দিয়ে মুস্কিলে পড়বার ভরসা এনাদের নেই। নীলকণ্ঠের বন্ধু উকিল মধুবাবু চুপিচুপি তাকে সেধে গেছে এখানে যোগান বন্ধ ক’রে তাকে দুধ দিতেদাম সে বেশী দেবে, আগাম দেবে। কিন্তু তখন নীলকণ্ঠকে গৌরাঙ্গ খাতির করত,