পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিন্তামণি ৷ 及哈 রঘুর বাড়ী গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে হাহুতাশ করার জন্য গৌরের মা উতলা হয়েছিল, ছেলের জবাবটা শোনামাত্র সে ছিটকে বেরিয়ে গেল । “ফের যাস তো ঘরে কুলুপ দিয়ে যাস।” ঘরে একটা কুলুপ আছে, তাতে চাবি ঘোরে না। কুলুপ দেবার উপায় থাকলে গৌরের মা কি আর এতক্ষণ আগলে বসে থাকে। চিন্তামণির সাবান-কাচা সাদা কাপড় একদাশীর চাদের আলোর রঙ ফিরিয়ে দিয়েছে গৌরের একরাত্তি উঠোনে। তার পায়ের কাছে পেঁপে গাছের ছায়ার ডগাটাকেও ঝাঁকড়া চুলো দৈত্যের মাথা বলে কল্পনা করা যায়। মানুষ-মরা সন্ধ্যার আলো ছায়া দিয়ে পৌরাণিক রহস্য চারিদিকে ঘনিয়ে আনা পুরাণঘেষা কল্পনারই কাজ । “বোঁ বুঝি হোথা ? “বেী ? কার বৌ ? ‘ওমা ! বেী নেই ? আঁচলের তল থেকে হাত বার করে গালে দিয়ে চিন্তামণি অবাক হয়ে যায়। - ‘পালাই বাবা তবে ।” “দুধ লিয়ে যাও।” গৌরাঙ্গ বিরক্ত হয়েছে। বুঝে চিন্তামণির একটু রাগ হয়। এতটা বাড়াবাডি তার ভাল লাগে না। প্ৰথমে সে ভেবেছিল রঘুর বেী গৌরের বোন টোন কেউ হবে, তারপর পটলের কাছে শুনেছে সে ওর কেউ নয়। ওর জন্যে মানুষ কি মরতে পাবে না। সংসারে ? গায়ের কেউ মরলেই যদি এমনি ধারা করতে হয়, টোকাই যে ভার হবে মানুষের । দুধের পাত্র হাতে নিয়ে চিন্তামণি নালিশের সুরে বলল, “একলাটি কি করে যাব ভাবছি।” “কি করে এলে ?” “এখন এইছি ? সন্দে না লাগতে এসে ঠায় বসে রাইছি। তোমার জন্যে ।” বাছুর ছেড়ে দিয়ে গৌর চিন্তামণির অনেকখানি তফাৎ দিয়ে গিয়ে দাওয়ায় উঠিল । সামনে গিয়ে দাড়াবার সাধ জাগলেও কেমন যেন সাহস হল না । চিন্তামণি একটু পিছিয়ে গেলে সে সরমে মরে যাবে। তার ফাকা বাড়ীর উঠোনে তাকে সামনে দাড়াতে দেখে চিন্তামণি পিছিয়ে গেলে তার যে লজ্জা আর অপমান হবে তার বড়ো লজ্জা আর অপমান জীবনে যেন তার জোটেনি, জুটবে বলেও মনে হ’ল না ।