পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘সড়ক ধরে যাওগে না, যদি ইদিক পানে ডর লাগে ? রাত হয়েছে কত, সড়কে লোক চলছে, সাখী পাবেখন।” “ডর তো সেখানে গো, কেমন সাখী জুটবে তাকি জানি ? তোমাদের দেশের মানুষ কেমন তোমরাই জানো ভালো, আমি হলাম ভিন দেশের লোক।” একাই ফিরবে ভেবেছিল চিন্তামণি, আগে তার ভয় ছিল কম। ভয়ের কথা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে এতক্ষণে ভয়টা তার সত্যই বেড়ে গেল। এদিকে মেঠো পথের নির্জনতা আর ওদিকে বাধা সড়কের বিদেশী অজানা পুরুষের কথা ভেবে গা তার ছমছম করতে লাগল। পায়ে পায়ে সে এগিয়ে এল দাওয়ার কাছে। মিনতি জানিয়ে বলল যে গৌর তাকে পৌছে দিয়ে আসুক ! ঘরে কুলুপ না দিলে কিছু হবে না, কতক্ষণ আর লাগবে তাকে এগিয়ে দিয়ে গৌরের ফিরে আসতে ? এসেই বোকামি করেছে চিন্তামণি — ঘাট সে মানছে গৌরের কাছে। “শোন বলি কেন এলাম ।” বিদেশ বিভুয়ে এক পড়ে গিয়ে কি যে কষ্ট চিন্তামণির ! এসে থেকে সে সমান একটা মানুষ পায়নি, চাষী-গেরস্থ ঘরের মানুষ, এক ধাচের মানুষ, যে মন খুলে দুটাে কথা কয়ে বাঁচবে। বাবুর বাড়ী মানুষ আছে ঢের কিন্তু সবাই তারা ভিন্ন জাতের আলাপ করে সুখ নেই। ঝি আর মজুর মাগীদের সাথে কি তার বনে, সে ছিল চিরটা কাল ঘরের মেয়ে, ঘরের বেী আর ঘরের রাঢ়ী ! ওই যে কথায় বলে জলের মাছের ডাঙ্গায় ওঠা, সেই দশা হয়েছে চিন্তামণির। তাই না সে এসেছিল দুধ নেবার ছুতোয় গৌরাঙ্গর মা বোন মাগের সাথে দু’দণ্ড কথা কইতে। ‘পৌছে দেবে না মোকে ?” ‘দেব না বলিছি ?” মেঠো পথে সাপের ভয়। চিন্তামণিকে সঙ্গে নিয়ে গৌর সডকের দিকে এগিয়ে গেল। অপরিচয়েব সব ব্যবধান তাদের তখন ঘুচে গেছে। বাবুর বাড়ীর দাসী বলে চিন্তামণিকে একটু পর মনে হয়েছিল গৌরাঙ্গের, কি ভাবে তাকে নিতে হবে ঠিক ঠাহর করতে পারেনি। ওরা কোন জাতের মেয়ে-মানুষ আর কেমন ওদের হালচাল তা কে জানে! নইলে চিন্তামণির সঙ্গে কথা কইতে কি গৌরাঙ্গের ভাবতে হত, না কোন ব্যবহার উচিত হবে ঠাহর করতে তার ফাপর লগত এতক্ষণ ? চাষীর মেয়ের মন না জালুক, মনের গড়ন চাষী জানে। মেয়েপুরুষ নির্বিশেষে বুলিও চাষীদের এক,- কথার ও ভাষার মানের গণ্ডী সম । এইটুকু পথ যেতে ষোতে তাই দু'জনের ব্যগ্রতাহীন অনায়াসে কথোপকথনে অনেক কথার আদান