পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W VIR মানিক গ্ৰন্থাবলী একটি চারকোণা টেবিলে সরসী লেখাপড়া করে, তার সভাসমিতির কাগজপত্রেই টেবিলের অর্ধেকটা ভরিয়া আছে। ছোট একটি শেলফে বাছা বাছা বই, প্ৰত্যেকটি বই রাজকুমারের পড়া। নির্বিচারে ভালমন্দ সব বই পড়ার সময় সরসীর হয় না। রাজকুমারের সঙ্গে তাই তার বন্দোবস্ত আছে, রাজকুমার নিজে পড়িয়া যে সব বই তাকে পড়িতে বলে শুধু সেই বইগুলিই সে পড়ে - তার জ্ঞানবুদ্ধির আয়ত্তের বাহিরের বইগুলি ছাড়া ৷ এঘরে প্রায়ই অনেক মেয়ে জড়ো হয়, সোফা চেয়ারে ঘরটি একটু ঠাসিয়া ফেলিতে হইয়াছে। জানালার কাছে গেরুয়া আস্তরণ ঢাকা একটি ঈজিচেয়ার, সরসী ওখানে বিশ্রাম করে। আন্তরণে মাথার চুলের দাগ পড়িয়াছে টের পাওয়া যায়। সারাদিন ছুটাছুটির পর ওখানে চিৎ হইয়া שאוט সরসী না জানি কি ভাবে । দশজনের সঙ্গে সরাসীর কারবার, সর্বদা সে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে, দু’চারজন সঙ্গিনী সারাদিন তার আছেই। সরাসীকে এই ঘরে এক কল্পনা করিতে গিয়া রাজকুমারের মনে হয় সে যেন নিজেরই এক রহস্যময় ভাবপ্রবণতাকে প্রশ্ৰয় দিতেছে । সরসীর ফিরতে দেরী হইতেছিল। এত রাত্রে তাকে এক বসাইয়া কি করিতেছে। সরসী ? আত্মসম্বরণ করিতেছে? রাজকুমার নিজের কাছেই মাথা নাড়ে। যতই বিচলিত হোক সামলাইয়া উঠিতে সরসীর সময় লাগে না, নির্জনতার প্ৰয়োজন হয় না । নীচে তার যখন কান্না আসিয়াছিল তখনও এক মিনিটের জন্য উঠিয়া গিয়া কঁাদিয়া অথবা কান্না থামাইয়া আসিতে হয় নাই। রাজকুমার মৃদুস্বরে ডাকে, সরসী ? পাশের ঘর হইতে সরসী সাড়া দেয় আসছি। কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হয়। সরসীর গলা । নীচে অতি সহজে যে-কান্না সে আটকাইয়াছিল, ও ঘরে গিয়া সত্যই সত্যই তবে কি সেই কান্নাই সে কঁাদিতেছে? রাজকুমার কাঠ হইয়া বসিয়া থাকে। রিণির কাছে তার খাপছাড়া প্ৰস্তাবের বিবরণ শুনিয়া এমন আঘাত লাগিয়াছে সরাসীর মনে ? রিণিকে কথাটা বলার আগে সে শুধু ভাবিয়াছিল, এসব কাণে গেলে মালতী কত কষ্ট পাইবে। সরাসীর কথা তার মনেও আসে নাই। শেষ পর্যন্ত আঘাতটা তবে পাইল সরসী ? রাজকুমার ভাবিয়াছিল, সরসী বাহির হইতে ঘরে আসিবে। শোয়ার ঘরের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে চাহিয়া তার চোখের পলক পড়া বন্ধ হইয়া গেল । সরসী আগাইয়া আসিল আরও কয়েক পা ।