পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

No: মানিক গ্ৰন্থাবলী চোখের পলক ফেলিয়া রাজকুমার নিজের চোখের জলীয় ভ্ৰান্তিকেই যেন মুছিয়া দিতে চায়, তারপর হারাণে গোধূলির নিম্প্রভ দিগন্তে সোণার থালার মত নতুন চাদকে উঠিতে দেখিয়া শিশু যেভাবে চাহিয়া থাকে তেমনি মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখিতে থাকে মালতীকে। সরাসীকে তার মনে পড়িতেছে, হৃদয়-সাগর মন্থনে উখিত উর্বশী সরসীকে। সে যেন কতদিনের কথা, রাজকুমার যেন ভুলিয়া গিয়াছিল । তেমনি অনবদ্য নগ্নতার প্রতিমূর্তির মত মালতীকে ওইখানে, যেখানে সে দাড়াইয়া আছে কৃত্রিম আলোয় সাজানো পুতুলের মত, দাড় করাইয়া দু'চোখ ভরিয়া তাকে দেখিবার জন্য রাজকুমারের হৃদয় উতলা হইয়া উঠে। দেহে মনে আবার সে যেন সেদিনের মত নবজীবনের, মহৎ আনন্দের সঞ্চার অনুভব করে । তার আশী হয়, সরসীর মত মালতীও আজ তাকে সমস্ত শ্রান্তি ও ক্ষোভ ভুলাইয়া দিতে Iারিবে, আবার নিরুদ্বেগ মুক্তি জুটিবে তার, আবার সে উঠতে পারিবে তার আকাশের আবাসে, যে কুলায় ছাড়িয়া নিজের ইচ্ছায় সে নামিয়া আসে নাই। নিজের অজ্ঞাতসারে রাজকুমার উচ্চারণ করিতে থাকে, মালতী ! মালতী ! পথহারা শ্ৰান্ত মুমূর্ষু শিশু যেভাবে তার মাকে ডাকিয়া কাতরায় । কিন্তু মালতী শুধু মাথা নাড়ে। রাজকুমার বুঝিতে পারেনা, আবার আবেদন জানায়। মালতী মাথা নাড়ে আর আঁচলের প্রান্ত দিয়া নিজেকে আরেকটু ঢাকিতে চেষ্টা করে । কথা যখন সে বলে তার কণ্ঠস্বর শোনায় কর্কশ । মালতী বলে, শোন। আমার কেমন যেন লাগছে। কেমন লাগছে মালতী ? গা গুলিয়ে বমি আসছে। ক্ৰোধ, বিরক্তি আর বিষাদে রাজকুমারের অনুভূতির আধারে ফেনিল আবর্তের সৃষ্টি হয়। তীব্র সঙ্কীর্ণ বেদনার পুনরাবৃত্তিময় সংক্ষিপ্ত আবেদন ক্ষণিকের নির্বিকার শান্তিতে লয় পায় আয় আর্তনাদ করিয়া ওঠে। সে অনুভব করে, স্পষ্ট হইতে স্পষ্টতর ভাবে অনুভব করে, ভয় ও শ্রদ্ধার বশ্যতা, কাব্য ও স্বপ্নের মোহ, আবেগ ও উত্তেজনার তাগিদ, কিছুই মালতীকে ভুল করিতে দিবে না। তার দিকে মালতীর গতি বন্ধ করিয়া কোনদিকে তাকে চলিতে হইবে দেখাইয়া দিবার কথা সে যা ভাবিয়াছিল, তার কোন প্ৰয়োজন ছিল না । মালতী আর আগাইবে না । সে ডাকিলেও নয়, হাত ধরিয়া টানিলেও নয়। শুধু আজ নয়, চিরদিন এই পর্যন্তই ছিল মালতীর ভুলের সীমা। ভুল কি ভুল নয়, তাও হয়তো মালতী জানে না, এখনো হয়তো সে ধরিয়া রাখিয়াছে আজ রাত্রেই তার প্রিয় মিলনের রাত্রি, কিন্তু