পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি দিন কাটবে মোদের ? দু’দিন বাদে সেই তো পড়বি দালালের হাতে, নয়তো ক্যাম্পে যাবি, ছিনিমিনি খেলবে তোকে নিয়ে ? তার চেয়ে বরং একটা রাত, একটা রাতও পুরো নয়, মদটব্দ খেয়ে বাবু, বেহুস হয়ে ঘুমোলে দোর খুলে দিবি Q35 বলতে বলতে বাইরের ক্ষীণ চাঁদের আলোয় চালার আবছা অন্ধকারে হুড়মুড় করে এসে ভিড় করে তাদের গত মাসগুলির বীভৎস অভিজ্ঞতা — ক্ষুধার জালা, আশ্রয়ের অভাব, শীত, নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার, নোংরামি, মৃত্যু। অটলের গল। কৰ্কশ হয়ে উঠতে থাকে, খোঁকি কুরের আওয়াজের আভাস আসে। ‘রাতারাতি উধাও হয়ে যাবো দুজনে যা পারি বাগিয়ে নিয়ে। সুখে থাকব। বাবুকে বলেছিস তো বাড়িতে লোক থাকলে যাবি না ? লজ্জা করবে ? ‘বলেছি।” মালতীর গলাও এবার শুকনো । রাত বাড়ে। দূর থেকে একটা হল্লার অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসছিল, ক্রমে সেটা থেমে যায়। পোড়োবাড়ির সামনে দাড়িয়ে বাধা খ্যানখ্যানে গলায় খানিক্ষণ পলাতক একটা মানুষকে গাল দিয়ে শুতে যায়। ওবেলার রান্না অন্নব্যঞ্জন অন্ধকারে বসেই তারা খায় । কলসীর জল ফুরিয়ে এসেছে, জলটুকু খেতেই শেষ হয়ে যায়। অটল ছেড়া ন্যাতায় এটো হাত মুছে নেয়। রাত আরেকটু বাড়লে দু’জনে পথে বেরিয়ে পড়ে । ছোট একটা পুটলি সঙ্গে নেয় অটল। কিই বা আছে নেবার। কঁথাকণি চট মাটির ইডি কলসী ভাঙা কড়াই নিয়ে কি হবে।

  • কথাও আলো নেই, দোকান পাট বন্ধ, রাস্ত নির্জন । কুকুরগুলি ছাড়া এরি মধ্যে চারিদিকে সব "মরে গেছে। বড় রাস্তায় লৱী চলার আওয়াজ আরও স্পষ্ট হয়েছে। বটতলায় কাপড় মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে কয়েকটা মানুষ। জীবনে প্রথম চুরির কথা ভেবে অটলের এখন বেশ ভয় করে, কেঁপে উঠে আঁকু-পাকু করতে থাকে বুকটা । কদিন ধরে সব পরিপাটিরূপে ছক কেটে রেখেছে মনের মধ্যে, ভয়ের কথা মনেও আসেনি। নিজেই চাকর ঠাকুর সরিয়ে দিয়ে বাবু থাকবে এক, মদের নেশায় উপভোগের শ্রান্তিতে বেছ'স হয়ে ঘুমোবে। জাগেই যদি নেহাৎ, লোহার এই যে ডাণ্ডা নিয়েছে। অটল কাপড়ের তলে মালতীকে না জানিয়ে, তার এক ঘায়ে আবার বেইস করে দেবে। কে চুরি করেছে জানাজানির ভয় তো সে করে না, জানাজানি যে হবেই কাজটা কাদের, অটল তা জানে। কাজ হাসিল করে পালাতে পারলেই তার হল। দরকার হয়তো মালতীকে ফেলে একাই নয়। সে পালাবে । তবে তার ভয়টা কিসের ? আজকের আগে তো এ অন্ধ উদ্বেগ আর এলোমেলো