পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

809 মানিক গ্ৰন্থাবলী দুর্ভাবনা তার ছিল না। ভয়ের বদলে বরং উল্লাস জগত বাবুর টাকা পয়সা সব নিয়ে ভাগবার কথা আর দরকার হলে বাবুর মাথায় ডাণ্ডার ঘা বসাবার কথা ভাবলে, ভিতরের অকথ্য একটানা জ্বালা যেন খানিকটা জুড়িয়ে আসত, মনে হত তাকে যেমন মেরেছে আর মারছে সবাই, একটু তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বাবুকে মেরে। পেট ভরে খেয়ে ঘুমিয়ে ওঠার পর জালাটা যেন জুড়িয়ে গেছে অনেক। তখন থেকে ভয় ভাবনা উকি দিতে শুরু করেছিল, এখন স্পষ্ট আর আর প্রবল হয়ে উঠেছে। রাতে আবার না খেলেই হত । শরীরটা ভারী লাগছে, অবসাদ বোধ হচ্ছে । মনে হচ্ছে, এত সব হাঙ্গামা না করে যদি ভাঙ্গা কুঁড়ের খড়ের বিছানায় মালতীকে নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে থাকতে পারত, শুয়ে থাকলে চলত। উপোসী পেটে একটু অন্ন পড়তেই কেমন করছে প্ৰাণটা । পুরানো প্রাচীর ঘেরা মাঝারি সাইজের বাগানের মাঝখানে পুরানো বাডি ভেঙ্গে কে নতুন বাড়ি করেছিল, জবরদস্তি সরকারী দখলে এসে এখন বাবুর বাসা হয়েছে। কাঠের গেট খোলাই ছিল খানিকটা । গোটটা চেপে ধরে মালতী দাড়িয়ে পড়তে আস্তে ভঁর কোমৱে একটা গুতো দিয়ে অটল ফিসফিসিয়ে বল্পে, “ষা। ডর নেই!! খানিক বাদে ওদিকে ঘুরে গিয়ে পাচিল ডিঙ্গিয়ে পিছনে লুকিয়ে থাকবো, বাবু ঘুমুলে খিড়কি খুলে ডাকিস।” মালতী গেটের ভেতরে ঢোকে, আস্তে গোটটা ভেজিয়ে দিয়ে সরে পড়ে। বুক তার চিপ টিপ করছে ভয়ে, উত্তেজনায়। নিজেকে সে গাল ঢািক মনে মনে, লাঙল নিয়ে মাঠ চাষা বলদের লেজ মালা গেয়ে চাষা, তাকে দিয়ে আর কত হবে । কেবলি তার মনে পড়তে থাকে, সে পুরুষ, মালতী মেয়েলোক। তার যদি এই অবস্থা, মালতীর দশা না জানি কি হয়েছে ! বাবুর বাড়ির পিছনে কুয়োর কাছে গরু বাধা চালাটার ছায়ায় জবা-গাছের গুড়ি ঘেসে বসে একটু বেপরোয়া দুঃসাহসের জন্য সে ভিতরে ভিতরে আকাশ পাতাল হাতডিয়ে মাথা কপাল খোড়ে। সাহস আসে অদ্ভুত রকমের, যা দিয়ে তার কোনো কাজ হবার নয়। এখানে চুপটি মেরে ঘূপটি মেরে বসে না থেকে বাড়ির ভিতরে গিয়ে বাবুর মাথায় এখুনি লোহার ভাণ্ডাটা বসিয়ে দিয়ে সে কাজ হাসিল করার ইচ্ছাটা প্ৰবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে, মনে হয় এভাবেই কাজটা সহজে হবে, ভয় ভাবনার কিছু থাকবে না। দূরে পেটা ঘড়িতে এগারটা বাজে। বাৰু কি এখন হাত ধয়েছে মালতীর ? কাপড়ের নিচে লোহার