পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ဓုကျိဍ ওসমান বাড়ীতেই ছিল, সদর দরজা খুলে বেরিয়ে এসে কৃষ্ণেন্দুকে দেখে বলল, ‘কেষ্টবাবু! আসেন, আসেন। ছালাম।” হীরেনের দিকে সে তাকিয়েও দেখল না। অবজ্ঞাটা এতই স্পষ্ট যে হীরেনের ফস মুখখানা লাল হয়ে গেল। কৃষ্ণেন্দুর মত সে উদার নয়, নির্বিকারও নয়। রুষ্ণেন্দু ঠিক এই অবস্থায় পড়লে ওসমানের ব্যবহারকে অপমান বলে গ্ৰহণ করতেই অস্বীকার করত, যেচে হাসিমুখে তার সঙ্গে কথা বলত, প্ৰথমেই তাকে জানিয়ে দিত যে জটিল ব্যাপারটার একটা মীমাংসার জন্য তার সঙ্গে যে পরামর্শ করতে এসেছে বন্ধুভাবে । তবে হীরেনের সহাশক্তি আছে । কোন অবস্থাতেই সহজে সে বিচলিত হয় না। কৃষ্ণেন্দুকে ওসমানের সম্মান দেখানোর বহর দেখে তার মত অন্য কেউ হয়তো বলে বসন্ত, তোমরা কথা বলে ইন্দু, আমি চললাম,-বলে, গটগট করে হাঁটতে আরম্ভ করে দিত। হীরেন চুপ করেই দাড়িয়ে রইল। কৃষ্ণেন্দুকে বসতে দেবার জন্য ওসমান ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল। কোথায় বা বেচারী বসতে দেবে অতিথিকে ! বাড়ীর সামনে তার একহাত চওড়া একটু রোয়াক । তাড়াতাড়ি ভেতর থেকে সে একটা কাঠের চেয়ার নিয়ে এল। কিন্তু চেয়ার পাতবে কোথায়, বাড়ী তার রাস্তার ঠিক ওপরে, রাস্তায় ছাড়া চেয়ার পাতবার জায়গা নেই। বাড়ীর কোণে পুকুরের দিকে একটু ঢালু জায়গা আছে, ওখানেই চেয়ারটা সে পাতবে কি ? কিন্তু ওখানে বাড়ীর ছায়া পড়ে নি, এই কড়া রোদে কি মানুষকে চেয়ার পেতে বসতে দেওয়া যায় ? লজ্জিত অপদস্ত ওসমান অসহায় ভাবে জায়গাটুকুর দিকে তাকাতে লাগল, হাত থেকে চেয়ারটা নামিয়ে রাখবার খেয়ালও তার হল না । কৃষ্ণেন্দু হেসে বলল, ‘চলুন ভেতরে গিয়ে বসি। আপনার স্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ হবে। দেবেন। তো আলাপ করিয়ে ?” বলতে বলতে সে রোয়াকে পা বুলিয়ে বসে পড়ল, হীরেনকেও ডেকে বসাল। আহত করুণ চোখে ওসমান তাকিয়ে রইল। তার দিকে। দেখে মনে হতে লাগল, ” এতবড় একটা সবল তেজী মানুষ গৃহে সমাগত ভদ্রলোককে মনের মত সমাদর করতে না পেরে যেন ক্ষোভে দুঃখে লাঞ্ছিত শিশুর মত কাতর হয়ে পড়েছে। কত কষ্টে এই বাড়ীটুকু সে তুলেছে কেউ তা জানে না। জমি কিনে দু’খানা ঘর তুলতে তার নগদ টাকা ফুরিয়ে গেছে, সামনের এই দেয়াল আর রোয়াক করেছে টাকা ধার নিয়ে। এখন তার মনে হতে থাকে, এসব না করলেই হত । Y88 (t)