পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী সেগুলি কাছাকাছি অন্য জমি সম্পর্কে । রাতারাতি ওইসব জমিতে হেরম্ব ছোট ছোট কয়েকটি ঘর তুলে কয়েকজন লোক বসিয়ে দিয়েছিল, তারা ঘোষণা করছে যে বহুকাল ওইখানে তাদের বসবাস, এই জমিতে কখনো লাঙল পড়ে না, ঘর তুলবার জন্য বছরে তারা এত এত খাজনা দেয়। বীরেশ্বরকে । এই যে খাজনার রসিদ । এক রাত্রে ঘেরা জাল ফেলে বীরেশ্বরের পুকুর থেকে দেড়শ দু’শো টাকার মাছ তুলে হেরম্ব কুলি মজুরদের বিলিয়ে দিয়েছে। আশেপাশে আরও কুয়ো আছে। বীরেশ্বরের বাড়ির ভেতরের উঠানের কুয়ো থেকে সারাদিন খাবার জল নেবার জন্য লোক আসছিল। দু’তিন দিন চুপচাপ সহ করে কাটাল বীরেশ্বর, তার দুই ছেলে আর গায়ের কয়েকটি লোক দা’ লাঠি হাতে দরজার কাছে দাড়িয়ে থেকে তাদের ভেতবে ঢুকতে দেয় নি। এবার কি হবে ভগবান জানেন । ‘হেরম্ব চক্রবর্তীর এত রাগ হবার কারণ কি ?” “কারণ তো সব বললাম। আমরা গায়ের অনেকে একত্র হয়ে অন্যায় অত্যাচারে বাধা দিচ্ছি, এইটাই আসল রাগ । মেয়েমানুষ সংক্রান্ত একটা ব্যাপারও আছে।” দু’এক দিনের মধ্যে একবার ঝুমুরিয়া যাবে কথা দিয়ে ক্লষ্ণেন্দু তাকে বাড়ী পাঠিয়ে দিল । যেতে যেতে তার দেরী হয়ে গেল দিন পাচেক । বিকাল চারটাৰ সময় ঝুমুরিয়া পৌছে শুনল, দুদিন আগে বীরেশ্বর খুন হয়ে গেছে। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে দাঙ্গা বাধো” বাধো” অবস্থায় পুলিশ এসে পডে। বীরেশ্বরের দলকে ছত্ৰভঙ্গ করবার জন্য পুলিশ বন্দুকের ফাক আওয়াজ করেতারপরেই দেখা যায়, বন্দুকের গুলি লেগে বীরেশ্বর শেষ হয়ে গেছে। পুলি শেব গুলিতে নয়, পুলিশ ফাক আওয়াজই করেছিল, গাদা বন্দুক দিয়ে বীরেশ্বরকে মারা হয়েছে। পরীক্ষার পর জানা গেছে বন্দুকটি বহু পুরাণো ধাঁচের, গুলি বা ছবুরার বদলে পেরেক, লোহার টুকরো, পাথরের কুচি দিয়ে গাদা হয়েছিল। বন্দুকটি কার, কে ছুড়েছিল, কিছুই জানা যায় নি। আওয়াজ হওয়ার পর হৈ চৈ গণ্ডগোলের মধ্যে অনেকক্ষণ কেউ এক খেয়ালও করতে পারে নি যে অন্য বন্দুক ছুড়ে কেউ বীরেশ্বকে খুন করেছে। রুষ্ণেন্দু গায়ে থাকবার জন্য প্ৰস্তুত হয়ে আসেনি। পরদিন বেলা বারোটার গাড়ীতে সে চলে এল। অন্ততঃ এক সপ্তাহ ঝুমুরিয়ায় থাকবার জন্য প্ৰস্তুত হয়ে তাকে ফিরে যেতে হবে। বাড়ী পৌছল। সে রাত দশটায় । N As