পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

မုခါရ দুৰ্গা ও লক্ষ্মী একটু পরেই ঘরে ঢুকে রাস্তাকে ঘিরে বসল, নিমাই ও পরেশ দাড়িয়ে রইল দুয়ারের কাছে। ব্যাপারটা তাদেরও জানা ছিল, রম্ভার মড়া কান্নার অর্থদ্যোতক শব্দগুলি শুনেই তারা মোটামুটি অনুমান করে নিতে পারল কি ঘটেছে। ঘটনা নয়, ফলাফলটা । রম্ভ এক র্কাদলে হয়তো অল্পক্ষণের মধ্যেই কান্ন স্থগিত করে দরকারী কথা আলোচনার সুযোগ দিতে পারত, লক্ষ্মী আর দুৰ্গা তার সঙ্গে যোগ দেওয়ায় কান্নার আবেগ তার ফুলে ফেঁপে উথলে উঠতে লাগল। কান্নায় ভাটা পড়ার অপেক্ষায় বসে থাকলে রাত ভোর হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে দেখে কৃষ্ণেন্দু এক সময় বাধা দিয়ে বলল, “শুধু কেঁদে আর কি করবে। রম্ভ, কেঁদে না । এর একটা বিহিত করা চাই ।” ‘আর কি বিহিত করবেন কেষ্টবাবু।” রম্ভা বলল কান্দতে কান্দতে। “সেই কথাই বলছি। রম্ভ । কান্না থামিয়ে শোনো ।” বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস টেনে রম্ভ। থামল। তবু, থেকে থেকে নাক আর ঠোট তার ফুলে ফুলে উঠতে লাগল, ভেতর থেকে শোক ঠেলে উঠতে চাইছে। লক্ষ্মী ও দুর্গা মাঝে মাঝে অশ্বফুট স্বরে আপশোষের আওয়াজ করতে লাগল, হৃদয়ের কোমল অস্থি যেন বেদনার ভারে মচ মচ করছে । হীরেন ভেবেছিল, বাপকে তার গুলি করে মারা হয়েছে শুনে রম্ভ না জানি কি কাণ্ডটাই করবে, এদের শোক করার রকম দেখে সে একটু থ’-ই বনে গেল। রামপালের ব্যাপারটা সে মোটেই বুঝতে পারছিল না। চোখ দুটি রামপালের এতক্ষণ ছল ছল করছিল, মুখখানা অত্যন্ত করুণ করে সে তাকিয়ে ছিল রম্ভার দিকে। আগাগোড়া সে চুপ করে আছে, কোন প্রশ্ন করে নি, মন্তব্য জানায় নি। বৌ-এর শোক দেখে সে যদি হৃদয় বেদনাতে কাতর হয়ে থাকে, উদ্যোগী হয়ে কিছু জানিবার বুঝবার কৌতুহল তার নেই কেন ? এবার সে বিছানার হাতখানেক পিছনে সরে বেড়ার খুঁটিতে ঠেস দিয়ে চােখ দু'টি অদ্ধেকের বেশী বুজিয়ে দিল। মুখে তার ফুটে রইল সেই অসহায় করুণ ভাব, দীনতার ব্যথা প্ৰকাশের ভঙ্গির মত। রম্ভার দুঃখে তার সমবেদনা জেগেছে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই অনুভূতিরই আবেশে নিজে সে যেন হয়ে গেছে। বিভোর। “তুমি যে একেবারে চুপ করে গেলে রামপাল ? হীরেন শুধোল । “কি বলব বলুন ?” রামপাল বলল, ভেজা করুণ গলায়। Nd Net