পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী “তোমার রাগ হয় না ? গা জ্বালা করে না ?” “রাগ হলে আর করছি কি !”—চোখ মেলে রামপাল যেন একটু সজাগ হয়ে উঠল, জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তাও বলি বাবু, শ্বশুরমশায়েরও বাড়াবাড়ি ছিল খানিক। হেরম্ববাবু লোক কি সোজা না মানুষটা সে হেজিপোঁজি যে তার সাথে গায়ে পড়ে লাগতে যাওয়া ? লাখোপতি লোক। সবাই তার বশপুলিশ তক। পেটে পেটে তার প্যাচ। নয়তো পুলিশের ফাক আওয়াজের সাথে পুরাণে গাদা বন্দুক ছুড়বার বুদ্ধি কি যার তার মাথায় আসে ? সে সনাক্ত হবে না। হয়তো লাইসেন নেই, কিছু নেই, কেউ জানে না সে বন্দুকের খবর। ।” কৃষ্ণেন্দু ব্যঙ্গ করে বলল, “তুমি তবে সব শুনেছ। রামপাল ? আমার মনে হচ্ছিল তুমি বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছি, এসব কথা শুনতে তোমার ভাল লাগে না।” রামপাল নির্লিপ্তভাবে বলল, “মুখ বুজে থাকলে কানে শুনতে বাধা কি কেষ্ট বাবু? কথা না কইলে তো কালা হয়ে যায় না মানুষ !’ কৃষ্ণেন্দু রেগে বলল, “কথা কইতে হয়। রামপাল। বৌয়ের ব্যাপকে একজন কুকুর বেড়ালের মত গুলি করে মেরেছে শুনলে কথা কইতে হয়। মনে মনে যদি বুঝতেও পেরে থাক বীরেশ্বর বোকামি করেছে, যেমন কর্ম তেমন ফল হয়েছে তার, তবু কথা কইতে হয়।” শুনে রামপাল দমে গেল। ডান হাতের তালুতে একবার মুখ মুছে বিড়বিড় করে বলল, “কি জানি কেষ্টবাবু, জানি না । হা, দুঃখু হয়। বৈকি আজ্ঞা, নিশ্চয় হয়। শুনলে মনটা খারাপ হয়ে যায় ।” তারপর রামপাল আর মুখ খুলল না । কথা কইল কৃষ্ণেন্দু। নিঠুর সরলতার সঙ্গে। কঁাটাছেড়া সহজ ভাষায় সে বলে গেল মানুষের ব্যবহারের কথা। বীরেশ্বরের অপমৃত্যু যার নমুনা। এর চেয়ে ভীষণ, এর চেয়ে বীভৎস, এর চেয়ে মর্মান্তিক আলোচ্য বিষয় মানুষ তো আজ পর্যন্ত কল্পনাতেও আবিষ্কার করতে পারে নি, কৃষ্ণেন্দু নিজেকে সামলাতে পারল না । মানুষ ভাগ হয়ে গেল হেরম্ব আর বীরেশ্বরে ; যুগযুগান্ত ধরে হাজার হাজার হেরম্বের চোরা গুলিতে কোটি কোটি বীরেশ্বর মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে লাগল। অহরহ যে গভীর ক্ষোভ থমথম করে কৃষ্ণেন্দুর মনে, রম্ভার শোকের তাড়নে আজ বুঝি তাতে ঢেউ উঠেছে, কি যে ম্যাজিক এসেছে তার কথায়। রামপালের و&9