পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আজ রাস্তা তৈরীর নামে কড়া জুলুম চলবে। আর তোমরা মুখ বুজে থাকবে ? দিলাদলি বড় হবে তোমাদের ? যে গায়ে-’ একমুহূর্ত থেমে সে যোগ দেয়, "যে গায়ে অন্যায়ের সঙ্গে লড়তে জালালুদিন প্ৰাণ দিল, বীরেশ্বর প্রাণ দিল, ক’জন জেলে গেল ?” ছেলেরা মুখ ভার করে চলে গেল। নরেশ গেল না, যেখানে বসে ছিল সেইখানে বসে পাটি খুটিতে লাগল। কেউ কথা কয় না। দিগম্বরী এসে মুখ খুলতে গিয়ে কিছু না বলেই আবার চুপচাপ চলে যায়। ‘গায়ের ভদ্রলোকের ছেলে এরা । বড় হয়ে এরা ভদ্রলোক হবে ।” *ওরা তো খারাপ ছেলে নয় ?” দিগম্বরী বলে । হীরেন বলে, “সবাই ওরকম ভদ্রলোক হবে না। ইন্দু। সূৰ্যও এ গায়ের ভদ্রলোকের ছেলে ।” ‘সূর্য ? সূৰ্য এদের দলে থাকত না—মোহনলালের চাষা-ভুষোর দলে যেত।” চারিদিক দুপুরের মাটিফাটা চড়া রোদ । বাইরে তাকালে দেখা যায় পাক খেয়ে খেয়ে তাপ ওপরে উঠছে, দূরত্ব দুলে দুলে চোখে লাগিয়ে দিছে ধাধা। এই দুপুরবেলা কৃষ্ণেন্দু শোভাযাত্রা করবে, গাঁ৷ শুদ্ধ লোককে দু’মাইল পথ হঁটিয়ে নিয়ে যাবে হেরম্বের রাস্তায়, গরু ছাগলও যখন গাছের নীচে আর ঘরের কণাচে ছায়া খুজে নিয়ে ধুকতে থাকে। প্রকৃতিকে হিসাবে ধরতে কৃষ্ণন্দুর চিরদিন ভুল হয়ে যায়। গরমে ঘেমে, বর্ষায় ভিজে, শীতে কেঁপে আর বসন্তে হঠাৎ সঞ্জীবিত হয়েও সে যেন স্রেফ ভুলে থাকে সূর্য এক জায়গায় দাড়িয়ে নেই। “আঁ ? রোদ ? হোক রোদ । রোদে সকলের তেজ বাড়বে।” “সেরেছে। ’ বলে হীরেন নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসে, মিট মিট করে তাকায় বন্ধুর দিকে। ‘বীরেশ্বর দাঙ্গা বাধাবার উপক্রম করেছিল, তুই বুঝি, দাঙ্গা বাধাতে চাস ? ‘বীরেশ্বরের পথটা নেওয়া কি ভাল নয় ? শহিদ হতে পারব্য-বীরেশ্বরের কাজটাও হবে।” কৃষ্ণেন্দু পাণ্টা প্রশ্ন করল তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে। কৃষ্ণেন্দুর কথা শুনে হঠাৎ হীরেনের মাথার মধ্যে ঝিম্ ঝিম করে উঠল। কিছুদিনের অকথ্য অত্যাচারের প্রতিবাদেই তার দেহমনের স্বাস্থ্য এই শোচনীয় কৌতুক শুরু করেছে তার সঙ্গে, হৃদয়মন একটু গভীরভাবে নাড়া খেলেই মাথার মধ্যে যেন কেমন করে У 3) э ད།