পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী হীরেন গম্ভীরমুখে ভাবছিল, নিজের মনে মাথা নেড়ে সে বলল, “না, আমাদের বাড়ীতে থাকাটা ঠিক হবে না। একটা ভাড়াটে বাড়ীই ঠিক করে রাখব আপনাদের জন্যে ।” দিগম্বরীকে ধাধায় ফেলে হীরেন চলে গেল। একটু ভয় ভয় করতে লাগল দিগম্বরীর। হীরেনের পাতলা পাঞ্জাবী ঘামে ভিজে গিয়েছিল। অতি মৃদু, অতি অদ্ভুত একটা সুগন্ধ দিগম্বরীর নাকে লািগছিল, আতর কি এসেন্স কে জানে! বড়লোকের ছেলে; এমন সুপুরুষ, সে কেন এলোমেলো কথা বলে ? তবে চাকরিটা সে নিশ্চয় করে দেবে-দু’শো টাকার চাকরি । এতদিনে কি তার লক্ষ্মীপূজার ফল ফলিল, মা লক্ষ্মী মুখ তুলে চাইলেন ? নিজের হাতের দিকে চেয়ে দিগম্বরীর চোখে জল আসে। শুধু সরু দু’গাছি চুড়ি। আর কানে দুটি মাকড়ি। আর কিছুই তার নেই-একে একে সব গেছে। হাতে টাকা হলেই আগে সে চুড়ি গড়িয়ে নেবে, তিনিগাছি করে। তারপর হার। বিছে হারই তাকে ভাল মানায়। মোহনের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুর আলোচনা তখনো শেষ হয় নি। মোহন কয়েকটা বাস্তব প্রশ্ন তুলেছে, কৃষ্ণেন্দু তার জবাব দিচ্ছে। রম্ভ একমনে শুনছে, ভুরু কুঁচকে তাকাচ্ছে তার ভায়ের দিকে। এবারও নরেশ রম্ভার সঙ্গে এসেছে। সে কিছু শুনছে কিনা সন্দেহ। অদ্ভুত বিহবল দৃষ্টি, বদ্ধ পাগলের যেন এসেছে আবেশের বিহবলত। । রাস্তাকে দ্যাখে অনেকেই, হীরেনও কতবার দেখেছে। নরেশের দেখাটাতে একটু বেশীরকম বাড়িবাড়ি আছে । আগেও নরেশকে সে এ ভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। হয় তো ঠিক এভাবে নয়, এই রকম একাগ্রতার সঙ্গে সকাতর হিংস্র দৃষ্টিতে। আজ তার চোখে যেন উকি মারছে হাজার হাজার চাদে পাওয়া কিশোর লম্পট । জামা গায়ে দিয়ে জুতো পরতে পরতে হীরেনের মনে পড়ল টেপির ব্যাপারটা। টেপিকে নিয়ে নরেশ পালাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মিলন ঘটিয়ে দিতে চাইলে তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি। তার এলোমেলো পাগলামির মানেটা খানিক অনুমান করেছিল শুধু হীরেন। এতো সংসারে হরদম ঘটে। একজন জালায় আর জালাতন করে, আরেকজনকে তাই দরকার হয়। কৃষ্ণেন্দু নরেশকে ভয়ানক মেরেছিল বল হীরেনের বড় রাগ হয়েছিল, এ যেন ধাক্কা খেয়ে একজন আছাড় খেয়েছে বলে তাকে শাসন করা । মারি খেয়েও কৃষ্ণেন্দুর প্রতি নরেশের টান আর ভালবাসা দেখে হীরেন একটু থতমত খেয়ে গিয়েছিল, একটুও ঈর্ষাও

  • ο No