পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী রম্ভ। মিনতি করে বলল, “ধমক ধামক দিয়ে নিয়ে যান হীরেন বাবু। বডড জালাতন করছে আমাকে । এইটুকু বয়সে শয়তানের ধাড়ী হয়ে উঠেছে ছেলেটা। গাছের একটা পাকা সি দুরে আমে চোখ রেখে আরও উদাসীন ভাবে হীরেন বলল, “তুমি প্রশ্ৰয় দাও কেন ? 'ওমা ! সে কি কথা ? কত গাল দিইছি, ঝাটাপেটা করব বলেছি?—নরেশকে আসতে দেখে সে থেমে গেল । তাদের দিকে তাকাতে তাকাতে খানিক তফাৎ দিয়ে কি উদ্দেশ্যে নরেশ কোথায় চলেছিল। বলা যায় না, রম্ভ তাকে ডাকল, “নরেশ শোন, ইদিক আয়। হীরেন বাবুর সাথে তুই কাল কলকাতা ফিরে যাবি, বুঝলি ? নরেশ কিছু বলার আগেই হীরেন বেরিয়ে গেল। নরেশ কলকাতা যেতে অস্বীকার করলে তার সামনেই হয় তো রম্ভ তাকে ঝাটাপেটা করতে চাইবে, সেটা সহ করার মত মনের অবস্থা হীরেনের ছিল না । আবছা অন্ধকারে ঝামুরিয়ার কুৎসিৎ গ্ৰাম্য চেহারা ঢাকা পড়েছে। সকলে বলে তাই হীরেন। চিরকাল সায় দিয়ে এসেছে, কিন্তু গ্রামে গিয়ে কোনদিন খুঁজে পায়নি। ঘর বাড়ী বন জঙ্গল মাঠ ঘাট পথের মধ্যে কোথা লুকিয়ে আছে গ্রামের সেই বিখ্যাত শ্ৰী । খড় টিন বঁাশ কাঠ মাটি দিয়ে গড়া বাড়ীগুলি আদিম স্থাপত্য শিল্পেরও কুৎসিৎ ব্যঙ্গ। বদরঙ্গ একটু তলানি জলের দীঘি, ভাঙ্গা ইটের পুরানো শ্ৰীহীন ঘাট, আগাছা ভরা পচা মাটির গর্তে পচা ডোবা-পুকুর, এবড়ো খেবড়ো কর্কশ বর্ণহীন মাঠ। আর কি বিশ্ৰী পোষাক আর চেহারা মানুষগুলির, কি দৃষ্টিকটু সব গরু বাছুর। এখন ওসব চোখের আড়ালে। হীরেন আরাম পেল। ধূলোয় ভরা কাচা উচু পথ দিয়ে চলতে চলতে এক মোড়ে এসে হীরেন দাঁড়াল। গামছা কঁধে গরু তাড়িয়ে বাড়ী ফিরছিল কাতিক। মাঝ বয়সী। জোয়ান মানুষ, বুকে পিঠে ছড়ানো দাদ। বাদিকের গালেও একটু দাদা হয়েছে, বেশী না ছড়ালেও বেশ জমকালো । “মদের দুকান ? বলতি পারতাম। বাবু। ওই যে বুড়ে বটগাছ দেখতিছেন ওনার গায়ে হাট। হাটের ‘’ পিছে মাগিদের ঘর-দু’রশি তফাতে চরণ সা’র দুকান ৷” হীরেন ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। অতি প্ৰাচীন এক বটগাছের কাছে কতগুলি শূন্য চালা। আজ হাটবাজার নয়। পূর্বে একটু তফাতেই গায়ে গায়ে 3: ob7