পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা তারপর একটু ইতস্ততঃ করিয়া আবার বলিলেন, “তোর যদি সাধ হয়, যা না তুই, কিছুদিন বেড়িয়ে আয়াগে না। কলকাতা থেকে ?” মনোমোহন গম্ভীরভাবে বলিল, “কিছুদিন বেড়িয়ে আসার কথা হচ্ছে না । কলকাতায় স্থায়ী বাসা করব ।” 'ঘরদোরের কি হবে ? বিষয় সম্পত্তির কি হবে ?--মা ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন । এ সমস্যার সমাধান মনোমোহন মনে মনে ভাবিয়া রাখিয়াছিল। বাড়ীতে আশ্রিত এবং আশ্রিতার সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। নিজেদের স্বচ্ছলভাবে ভাল ভাবে চলিয়া যায় এরকম বিষয় সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও কৰ্ম্মহীন পরাশ্রয়ী ওদের অন্ন যোগাইতে গিয়া কোনদিন তাদের টানাটানি ঘোচে নাই। জোকও কষ্ট করিয়া জীবজন্তুর গায়ে নিজেকে সাটিয়া দিয়া রক্ত শোষণ করে-নিজের চেষ্টায়। আর এই আশ্রিত আশ্রিতার দলটা তাদের বাড়ীতে বাস করিয়া তাদের অন্নবস্ত্ৰ ধ্বংস করাটাই একমাত্র কাজ বলিয়া মনে করে, জন্মগত অধিকার বলিয়া গণ্য করে! তবু নিকট হোক, দূর হােক, সম্পর্ক একটা তাদের সকলের সঙ্গেই আছে। কলিকাতায় সঙ্গে নেওয়া না গেলেও এখানে তো তাদের থাকিতে দিতে হইবে । পিসেমশায় এগার বছর সপরিবারে এ বাড়ীতে বাস করিতেছেন, সম্পর্কের হিসাবে তিনিই সকলের চেয়ে আপন, বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনার ভারটা তাকে দিয়া গেলেই চলিবে । পিসেমশায় লোকটি তেমন চালাকচতুর নয়, এদিকে আবার টাকা পয়সার ব্যাপারে বিবেকটিও তার তেমন সজাগ নয়। মাঝে মাঝে গ্রামে আসিয়া সে নিজে তদারক করিয়া গেলেও বিষয় সম্পত্তির ক্ষতি কিছু হইবেই। আদায়পত্রের কিছু টাকা মারা যাইবেই। কিন্তু এই ক্ষতিটা মানিয়া নেওয়া ছাড়া উপায় নাই। বড় লাভের আশা থাকিলে ছোটখাট অনিবাৰ্য্য ক্ষতিকে মানিয়া নিতে হয়। সহরে সে বসিয়া থাকিবে না,উপাৰ্জন করিবে । নিজে উপস্থিত না থাকায় সম্পত্তির আয় যতটুকু কমিবে আর সহরে বাস করিতে খরচ যতটুকু বাড়িবে, তার চেয়ে অনেক বেশীই সে উপাৰ্জন করিতে পরিবে এটুকু আত্মবিশ্বাস তার আছে। সহরে টাকা রোজগারের অনেক সুবিধা, অনেক সুযোগ । কেবল বাড়ীতে নয়, গ্রামেও সাড়া পড়িয়া গেল। ২ এ যাওয়ার মানে সকলেই R8 R