পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী জগদানন্দ মুহু হাসিয়া বলে, “না। আমিও তাই ভাবছিলাম-আমার কথা শুনে আপনি হয় তো মনে করছেন আমি অলৌকিকে বিশ্বাসী। আমি এতক্ষণ বললাম আমাদের একপেশে যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের এখানকার জ্ঞানবুদ্ধি অনুসারে যা অসম্ভব মনে হয়, তাই আমরা অলৌকিক বলে উড়িয়ে দিই। একটা ব্যাপার কেন ঘটে কিভাবে ঘটে জানি না বলেই কি সেটা অলৌকিক হয়ে যাবে, ভূতুডে ব্যাপার বলে বাতিল হয়ে যাবে? একদিন হয় তো জানা যাবে ব্যাপারটা মোটেই অদ্ভুত কিছু নয়, বাস্তব নিয়মেই ঘটে থাকে।” কিন্তু বিজ্ঞানকে ডিঙ্গিয়ে কোন মাপকাঠিতে তবে বিচার করব ? বিজ্ঞান যা অসম্ভব বলছে কোন যুক্তিতে সেটা সম্ভব ভাবব ? “আপনি আমার কথাটা বুঝবার চেষ্টা করছেন না। আমি বিজ্ঞানকে ডিঙ্গিয়ে যেতে বলিনি। বিজ্ঞান যা অসম্ভব বলছে সেটা সম্ভব বলে মানতে হবে বৈকি! কিন্তু বিজ্ঞান আন্দাজে কোন কিছুকে অসম্ভব বলে না, কেন অসম্ভব তার অকাট্য বাস্তব ব্যাখ্যাও দেয়। কিন্তু আজও বিজ্ঞানের অনেক কিছু অজানা আছে-- আজও নানা আবিষ্কারের মধ্যে বিজ্ঞান অগ্রসর হচ্ছে। আজও বিজ্ঞান যা কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে না সেটাকেই আমরা অলৌকিক অবাস্তব ভাবিব কেন ? জগতে সবই যখন বাস্তব, চিন্তায় অবাস্তবের অলৌকিকের ফাকি থাকবে কেন ? ম্যাজিক দেখে তো আমরা ভাবি না। অলৌকিক কিছু ঘটেছে। বাস্তব জগতে দুৰ্বোধ্য কিছু ঘটলে হয় ভাবিব অলৌকিক, নয়। একেবারে উড়িয়ে দেব।” মোহন বিব্রত বোধ করে। জগদানন্দ ঠিক গুরুর মতই কথা বলিতেছে। জগদানন্দ তার মুখের ভাব দেখিয়া নিজের মুখে হাসি ফুটাইয়া বলে, “তুকতাক মন্ত্রতন্ত্রের কথা বাদ দিন না । ভালবাসার কথাই ধরুন । বিজ্ঞান আজও বলতে পারে না ভালবাসাটা ঠিক কি ব্যাপার। বিজ্ঞান বলছে প্ৰেম কবির ফাক কল্পনা নয়, মানুষের প্ৰেম বাস্তব ব্যাপার। পশুপাখীর যৌন ব্যাপারের মতই মানুষেরও যৌন ব্যাপার-নিজেদের নতুন করে স্বষ্টি করা আর বঁাচার লড়াই চালিয়ে যাওয়া । মানুষের যৌন ব্যাপারে আরেকটা বাড়তি বাস্তব ব্যাপার আছে-প্ৰেম। কাব্যে সাহিত্যে ফেনিয়ে ফাপিয়ে ও রঙ দিয়ে এই বাস্তব রহস্যটাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়ে আসছে। ফেনা আর রঙটা ব্যাখ্যা করে বাতিল করে যৌন বিজ্ঞান প্রেমের মানে বোঝাতে চেয়ে পারেনি। শরীরবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, যৌন বিজ্ঞান, প্রেমের এদিক ওদিক সেদিকটা বুঝিয়েছে, প্ৰেমকে বোঝাতে পারেনি।' r VV