পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী মাথা ঘামান, যাদের প্রত্যেকের মুখে সে ঘোষণা-চিত্র দেখতে পায় ; আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। তোমার টাকা আছে, সহায় আছে, বয়স আছে, আমাদের বঁাচাও। নির্মলেন্দুর মনে হয়, সত্যই এ দায়িত্ব তার। যাদের ইচ্ছা ছাড়া কিছু নেই, ধীরেনের মতো যাদের দুটি খন্দরের জামা সম্বল, তার চেষ্টা করেও কী করতে পারে ? এ-কাজ তার, ওদের নয়। তবু ওরা প্ৰাণ দিতে চায়, হয়তো দিতেও পারে, তাই কাজ আরম্ভ হয়েছে ওদের রীতিতেই। কিন্তু এগোচ্ছে কই কাজ ? আত্মরক্ষার সাধ কই জাগছে তাদের মধ্যে যাদের তারা বঁাচাতে চায় ? আগ্রিম পুরস্কার হাত পেতে নিচ্ছে, তিরস্কার শুনে অপরাধীর মতো হাসছে। শান্তি নেই, তাই যে যত পারে দিচ্ছে ফাকি। তবু এখনও ধীরেন, দিবাকর আর দীনেশ চাবুকের বিরোধী, শুধু কথা বলে বুঝিয়ে ওরা সকলের চেতনা জাগাতে চায়। রাঘবকে একদিন খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিঠের খানিকটা চামড়া চেছে নিয়ে সেখানে লঙ্কা বাট লাগিয়ে দিলে, তার তিনটে তাত ভেঙে ফেললে আর ভেড়ির বঁধে কেটে তার জমিতে লোনা জল ঢুকিয়ে দিলে, আরও সঁইত্রিশ জন কি সুতো নিয়ে কাপড় বোনার বদলে বেচে ফেলতে সাহস পেত ? মইনে কাটা গেলে কি রোজ মজুরদের অসুখ করত ? লাঠির গুতো খাবার ভয় থাকলে কি সাবান, ফিনাইল, ওষুধের পয়সায় তাড়ি গিলত ? ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে জানলে কি কেউ দুদিনের জন্য কাজে ঢুকে কোম্পানীর পয়সায় ভাঙা ঘরের সংস্কার করিয়ে সরে পড়ত ? তৃতীয় দিন নির্মলেন্দু গিয়েছিল রাজগঞ্জে-মাইল তিনেক মোটরে, এক মাইল পায়ে হেঁটে, বাকী পথ নৌকোয়। রাজগঞ্জে রাঘব বাস করে। রাত্রে সে যখন ফিরে এল, মেজাজে তার এতটুকু উত্তাপ নেই। পরদিন মেঘহীন আকাশে তেজী সূর্য দেখা দিল, সে-ও চলে গেল। কলকাতায় । ডাক্তার বলল, “ভায়ের কিছু আছে মনে হয় না । গেরস্ত ঘরের বৌ তো ?’ নির্মলেন্দু বলল, “ছোটলোকের বৌ, ভীষণ নোংরা। দুর্গন্ধে ঘরে দম আটকে ‘কী যে খেয়াল আপনার!”-ডাক্তার হাসল, “দেখা যাক। কদিন থেকে 6यड इत् ।' “থাকব ।” 8 R 8