পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখে ভাত করে রেখেছিল, স্ফুলিঙ্গের অভাবে আগুন ধরাতে পারে নি। এবার একেবারে মশাল ছুইয়ে দিয়েছে। প্ৰথমে বোঝা যায় নি। বিকালে টের পাওয়া গিয়েছিল শুধু বাঝ আর কিছু নয়। তা, অমন ঝাঝি পথে ঘাটে কত লাগে। লক্ষ্মীও একদিন লাগিয়েছিল এবং এখনও তার জের চলেছে। কে জানত তাপের চেয়ে আগুন এত বেশী গরম ! দেবতার মতো, মানুষের মতো আর পশুর মতো একনিষ্ঠ মতি । গত্যন্তর না থাকার সামিল দুরবস্থা। প্ৰথম থেকে বেলারানী যদি এইরকম হত, গগন এমন ব্যাকুল হত। কিনা সন্দেহ । সে হত জানা কথা, একবার যা জীবনের সীমার বাইরে চলে গিয়েছিল আরেকবার তাই শুধু চােখে দেখা। পাড়ায় একদিন বিয়ে হল বেলারানীর গা-জালানো মোটাসোটা রূপসী একটি মেয়ের, বাসর থেকে বেলারানী এল খালি বাড়ীতে, বিনা ভূমিকায় আশ্ৰয় করল মেঝেতে বিছানাে গগনের ময়লা বিছানা। গগন খানিক বুঝল, খানিক বুঝল না। সার্ট কিনে গায়ে চাপাল, চুল আঁচড়াতে লাগল সযত্নে, একদিন অন্তর কামাতে লাগল দাঁড়ি। নিজেকে মনে হতে লাগল কোন এক দিগ্বিজয়ী সম্রান্ত ভদ্রলোক। পোকায় ধরা জীবন্ত বাঁশের কঞ্চি মনে হোক, মুনিব শশধরের মেয়ে তো বেলারানী । কি মেজাজ সে মেয়ের, কি তেজ ! একজনের দাপটে সারাটা দিন বাড়ীর মানুষ যেন তটস্থ হয়ে থেকেছে। গগনকেও সে যে রেহাই দিত তা নয়। রাত দশটায় খেতে বসেই হয়তো তীক্ষা গলায় চেচিয়ে উঠেছে, “এই ঠাকুর । এই হনুমান ! কত নুন দিয়েছ ডালে ?” অন্য কারো কাছে ডাল নুনকটা লাগেনি। প্ৰতিবাদ জানাতে সামনে এসে থালার দিকে তাকিয়ে গগন হেসে বলেছে, “পাতের নুন মেখে ফেলেছি দিদিমণি ৷” “তোমার মুণ্ডু করেছে দিদিমণি । কদিন না তোমায় বলেছি মুখের ওপর জবাব দেবে না ? দূর করে দেব, বজাত কোথাকার।’ পরদিন নিজেই দূর হয়ে যাবে ভাবতে ভাবতে গগন বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির শেষ জাগা মানুষটির সাড়াশব্দ শেষ হবার আগেই হয়তো এসেছে বেলারানী। জিদ নেই, তেজ নেই, অহংকার নেই-ভিখারিণীর মতো। অপরিপুষ্ট শরীরটির জন্য শুধু ভিখারিণী অভিসারিকার মতো অবশ্য, অন্য বিষয়ে তার একগুয়েমির বিকার সে সময়েও সমান জোরালই থাকত। BW)