পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলামসন ব্যাপার দেখে মহীধর বিব্রত হয়ে বলল, “তুমি বরং কিছু দিন বাইরে থেকে ঘুরে এসো বিলামসন।” বিলামসন মৃদু হেসে বলল, “ভেবো না রায়। দুচারজন অকৃতজ্ঞ বদমায়েস যদি চেচাতে চায়, চেঁচাতে দাও। বেশির ভাগ লোক আমাকে পছন্দ করে, আমাকে চায় ।” ‘তবে একটু নরম হও।” ‘ক্ষেপেছ? এই তো শক্ত হওয়ার সময় !" মহীধর তবু ইতস্তত করছে দেখে অরেল্যে তাকে ইসারা করে নিজের বসবার ঘরের নির্জনতায় ডেকে নিয়ে গেল। তাকে কোঁচে বসিয়ে পিছন থেকে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে মাথায় মাথা রাখল। মহীধরের রঙ কালো, রীতিমত কালে । তাকে অরেল্যে এইভাবে পিছন থেকে আদর করে। কারণ, মহীধর তার মুখ দেখতে পায় না বলে মুখের ভাব গোপন করার কষ্টটা তাকে করতে হয় না । “আমায় দেখলেই এইটুকু এইটুকু বাচ্চা ছেলেরা ঢ়িল ছুড়ে মারছে। কত বিস্কুট আমি খাইয়েছি। ওদের ! সেদিন যে কজনকে চাপা দিয়েছিলাম, সেটা কি আমার দোষ? রাস্তার মাঝখানে ওরা খেলা করবে, দূর থেকে হর্ণ দিলে সরবে না, কাছাকাছি এসে অতি স্পীডের মাথায় কেউ গাড়ি থামাতে পারে ? তাই বলে আমাকে দেখলেই ঢ়িল ছুড়ে মারবো! কি বলে তুমি বাবাকে চলে যেতে বলছি, ওদের অত্যাচার চুপচাপ সইতে বলছি ?” মহীধরের মাথা ঘুরতে থাকে। অরেল্যে তার কাছে শিক্ষা-দীক্ষা, ভাব, রুচি, ক্লাষ্টি, ক্লাব, হোটেল, সিনেমা, ট্ৰেণ, মোটর, এরোপ্লেন, বিদ্যুৎ, বেতার, সিভিলকোড, পেনাল-কোড, ডেমোক্রেসি প্ৰভৃতির অভ্যস্ত চেতনার মতো । মনে হয়, অরেল্যের অভাবে সে অচেতন হয়ে যাবে। বিলামসনের ভয় তো আছেই, অরেল্যেকে হারাবার ভয়ও তার কম নয়। ভয়টা কমতে চায় না কিছুতেই । মহীধর কাবু হয়ে থাকে। মহীধর ব্যাকুল হয়ে উঠলেও বিলামসনেরা কিন্তু যা কিছু ঘটতে লাগল সমস্তই তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিতে লাগল। গুলি করে, লাঠি মেরে, বেতিয়ে, বেঁধে রেখে, লুট করে, আগুন দিয়ে, বিলামসন জনপ্রিয়তা বাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল। উৎসাহ উদ্দীপনা ও উত্তেজনার নেশায় সে যেন হয়ে গেল নতুন মানুষ। মুখে শুধু তার ফুটে উঠতে লাগল, আতঙ্ক ও আপসোসের কতগুলি রেখা। 8ግእ