পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ভাগ্নের সাহায্য নাও ! দুবেলা আধাপেটা খেয়ে বেঁচে থাকো সেই সাহায্য নিয়ে, ব্যবসাতে পাওনার বেশি আধলাটি পাবে না । ‘রাজা হয়ে বেঁচে থাক বাবা ’ বলে ভাগ্নেকে জড়িয়ে ধরে সেদিন, বছর চারেক আগে, কৃতজ্ঞতায় দণ্ডধারী কেঁদে ফেলেছিল। ডাক্তারীর আয়টা বেশ ভালো রকম হওয়ায় আজকাল বখরার ব্যবস্থা নিয়ে সে খুঁত খুত করে। বলে, ‘রুগী দেখার পয়সাতে তোর বখরা কিসের ? তুই যাস রুগী দেখতে ? তিন ক্রোশ পথ হেঁটে আমি দেখব রুগী-” শ্ৰীমন্তসহায় বলে, “সব রুগী আমার মামা। তুমি শুধু দেখতে গিয়ে ভিজিট লিয়ে এস।” \ গোবধানকে দুর্বোধ্য রহস্যের কথা শোনাতে শ্ৰীমন্তসহায় বড় ভালোবাসে। গোবধান বোকা মানুষ, কিছু বোঝে না, কিন্তু অনুভূতি দিয়ে কি যেন অ্যাচ করে সে বিহবল হয়ে যায়। সেই বিহবলতা স্পর্শ করে এদিক ওদিক সেদিক থেকে আঘাত পাওয়া শ্ৰীমন্ত্যসহায়ের অ্যাকাবঁকা মন । শ্ৰীমন্ত্যসহায়ের মনগড়া দর্শন, আকাশ পৃথিবী সূৰ্যচন্দ্ৰ তারায় জড়ানো তার আবেগ, জীবন মরণ সুখ দুঃখ ব্যথা বন্ধন মুক্তিকে আশ্ৰয় করা তার উদাস, মৃদু গম্ভীর গলার আওয়াজ সমস্ত মিলে গোবর্ধনের হৃদয়কে আকুলি ব্যাকুলি করিয়ে ছাড়ে। আজ বাস-এর গোলমালে কেউ আসে নি। বুড়ো শশীধর শুধু অনেক তফাতে বসেছে-সে। কিছু শোনে না, শুনতে পারে না। নটবরের বিধবা বোন মন্দিরে আলো জেলে রেখে গেছে, নটাবর এক সময়ে এসে ঘণ্টা নেড়ে দিয়ে যাবে। মন্দিরে আজকাল এক ছটাক চালও হয় না। একবেলা-চার পাচটা সারা দিলেও নয়। গোবর্ধনকে দেখে শ্ৰীমন্তসহায় ডাক দিল । কাছে গিয়ে গোবর্ধন বলল, “বসবার সময় নেই গো নায়েক মশায়। বাস এলে কুমড়োটা বেচব।” ‘কোথা তোর বাস ? বোস। ভালো করে নজর রাখা দিকি গোবর্ধন, ঠিক কখন বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা লাগে বলতে হবে তোকে ৷” ‘খিঙ্গে পেয়েছে নায়েক মশায় ।” ‘খিদে পেলেই খাস বুঝি তুই ? রাজা মহারাজা হলি কবে থেকে ? এ গায়ে কেউ আর খিদে পেলে খায় না গোবধান—তুই আর আমি ছাড়া। দুবেলা আধাপেটা খাস ? তবে তুইও বাদ গেলি। আমি চারবেলা খাই, পেট ভরে থাই, রাজভোগ খাই ! বৌটা এলে সেও খাবে। সবার খিদে সয়, আমার কেন সয় 8bፖቴዎ