পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমরা সবাই ভালো যাবার সময় সুবালা একবার রমেনুকে চান করে নিতে বলে গেল, আর কেউ খবর নিতে এল না। ঘরটা বেশী বড় নয়, দুটি চৌকি একটি টেবিল আর দু’খানা রঙ করা লোহার চেয়ার আছে। দুটি চৌকিতেই বিছানা গুটানো আছে। একটি সুকোমলের, অন্যটি দিবাকরবাবুর ছোট ভাই সুধাকরবাবুর শালা রঞ্জিতের। টেবিলের একপাশে আই, এ, ক্লাসের বই, বাকী অংশ জুড়ে স্কুলের নীচু ক্লাসের, ইংরাজী বাংলা অঙ্কের মলাট ছেড়া বই আর খাতা ছড়ানো । দেয়ালে বসানো কাঠের তাক দু’টিতে ঘুড়ি লাটাই, মার্বেল, রবারের বল, টিনের কৌটা, কাগজের, বাক্স থেকে শুরু করে পালিশ-চটা জুতো পৰ্যন্ত কি যে নেই বলা কঠিন। সুকোমল আর রঞ্জিৎ এ ঘরে থাকে এবং বাড়ীর গণ্ডা দেড়েক ছেলে-মেয়েদু বেলা এ ঘরে বসে নকুল মাষ্টারের কাছে পড়াশোনা করে। সুকোমল সঙ্গে এসেছিল, তার সঙ্গে দু’চারটি কথা বলার চেষ্টা করে রমেন সুবিধা করতে পারল না। কাটা কাটা জবাব দিয়ে সুকোমল কুটিল চােখে তাকে শুধু তাকিয়ে দেখতে লাগল। রমেন যখন ট্রাঙ্ক খুলে তার বই আর কাপড় বার, করছে, হঠাৎ সে চিবিয়ে মন্তব্য করল, “আমি ভাবছিলাম তোমায় ওপরে ভাল ঘরে থাকতে দেবে ।” “ঘর খালি নেই নিশ্চয়।” ‘নেই ? দেখে এসে না আছে কিনা। দোতলায় আছে তিন তলায় আছে।” সব বড়মামার নিজের লোকের দখলে-এক একজনের এক একটা ঘর !! খাটে না শুলে বড় মামার ছেলেমেয়েদের ঘুম আসে না।” “খাটে শুয়ো অভ্যাস হয়ে গেছে হয়তো ।” সুকোমল ফোস করে উঠল, “আমরা কেন নীচের স্যাতন্তেতে ঘরে গাদাগাদি করে থাকিব ? “পিসেমশায়ের ভাইও তো নীচের তলায় থাকেন ভাই।’ ‘সাধে থাকেন ? বাত নিয়ে সিড়ি ভাঙ্গতে পারেন না বলে। ছোট মামীরা ওপরে থাকেন।” রাগে অভিমানে সুকোমলের মুখখানা বঁকা দেখায়, “এই তো সবে এলে। দু’দিন থাকো, টের পাবে আমাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে। বাড়ীতে থাকতে দিয়েছে তাই যেন ঢের!” রমেন এক গাল হেসে বললে, “ধেৎ, তাই কখনো হয় ? খারাপ ব্যবহার যদি / (V)