পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী তার চোখের সামনে কমলার দিকে চাহিয়া উদ্ধত হাসিবার পর এই সকরুণ বিনয় প্ৰকাশে অনন্তের মুখ আরও বিবৰ্ণ হইয়া গেল। বলিল, সুশীলের অসুখ শুনলাম সামান্য অসুখ । আমি কাছে থাকলে বিরক্ত হয়ে ওঠেন । সারাদিন আজ কবিতা লিখেছেন সামান্য কয়েকটি কথায় কৈফিয়ৎ ও অনুনয়ের কি অপূর্ব সমন্বয়। অনন্ত যেন হতাশ হইয়া গেল,-কবিতা ? হঁ্যা । লিখবার সময় ওকে দেখলে আমার এমন ভয় করে । চােখ রক্তবর্ণ কপালে একটা শিরা দপদপ করছে জরের জন্য বোধ হয় । মাধুরী স্নান ভাবে হাসিল, হবে। কিন্তু আমার ভয় করে।-কোথায় বসবেন ? লাইব্রেরীতে। অনন্ত চিন্তিত মুখে লাইব্রেরীতে গিয়া বসিল । একটা প্লেটে একটিমাত্ৰ সন্দেশ আনিয়া কাগজপত্র সরাইয়া টেবিলে নামাইয়া রাখিয়া মাধুরী বলিল, করেছি বোধ হয় পঞ্চাশটা, খাবেন মোটে একটা । বেশী খেলে তুমি খুশী হবে ? মাধুরী মান মুখে বলিল, হ’তাম, বেশী খেলে যদি আপনার শরীর খারাপ झ७शiद्ध उलश्न •ा शोकउ5 । একটু একটু করিয়া ভাঙ্গিয়া সন্দেশটা খাইয়া অনন্ত বলিল, জীবনটা দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে মাধুরী ! স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কথা ওঠার পরেই জীবন সম্বন্ধে তার এই আকস্মিক মন্তব্যে মাধুরী একটু বিস্মিত হইল। মৃদুস্বরে বলিল, জীবন দুর্বোধ্য বৈকি। একচুমুক জল পান করিয়া অনন্ত বলিল, শুধু অসামঞ্জস্য, কেবল খাপছাড়া বিধান। উচিত অনুচিতে এতটুকু মিল নেই। প্রমাণ স্থাখো, শরীরে স্বাস্থ্য নেই, তোমার তৈরি সন্দেশ একটার বেশী খেতে পারি না, মনে শক্তি নেই, সামান্য উত্তেজনার সূত্রপাতে আতঙ্ক হয়। তবু তো জীবন আমার নিঃস্ব নয়। নয় ? মাধুরীর কণ্ঠস্বরা যেন অনুযোগ করিল, আপনি তো উদাসীন, সন্ন্যাসী ! অনন্ত করুণ ভাবে হাসিয়া বলিল, উদাসীন নই, ভীরু ; সন্ন্যাসী নই, দুর্বল। (83