পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুরি চুরি খেলা দাড়াইয়া থাকিবার কোন প্রয়োজন মাধুরীর ছিল না। কিন্তু কমলার পিঠে আঁচলে বাধা চাবির গোছার দিকে চাহিয়া সে দাড়াইয়া রহিল। পরের কোলে গিয়াই ছেলে যে চুপ করিয়াছে এতে তার যেন কৌতুকের সীমা নাই। ছেলে পর হইয়া যাওয়ার আনন্দ যথাসাধ্য উপভোগ না করিয়া সে যেন এখান হইতে নড়িবে না । অনন্ত স্তিমিত নেত্রে মাধুরীর দিকে চাহিয়া ছিল, দীর্ঘ রাত্রি জাগরণের পর তার যেন বড় ঘুম পাইয়াছে। হঠাৎ সে সোজা হইয়া বসিল। এমন জমজমাট সৌন্দৰ্য সে জীবনে কখনো দ্যাখে নাই, পাথরে খোদাই করা এমন অর্থহীন তীব্র হাসিও নয়। মাধুরীর চোখের পাতাটি যেন কঁপে না, এক পায়ে ভর দিয়া দাড়ানোর ভঙ্গিতে অবসাদ আসে না, অনেক দিনের ইট চাপা ঘাসের মত এক মুহুর্তে সমস্ত মুখ অসুস্থ সাদা হইয় ওঠে - প্ৰতিফলিত সূর্যালোকের মত তার সেই বর্ণহীন শুভ্ররূপ দুই চক্ষুকে পীড়ন করে। কমলা আস্ফটম্বরে খোকার উদ্যত কান্না সংযত করে, বারেকের জন্যও মুখ ফিরাইয়া তাকায় না। কমলার দিকে চাহিয়া অনন্তের মাথার মধ্যে ঝিম্ ঝিম করিতে লাগিল। পরের ছেলে কোলে নিয়া ও মুখ ফিরাইয়া তাকায় না কেন ? কি ভাবে ও ? সে যে সুশীলকে কেন বরখাস্ত করিতে চায় মনে মনে তারই একটা ভুল বিশ্লেষণ করিয়া চলিতেছে কি ? অনন্তের মনে হইল মাধুরী উপস্থিত না থাকিলে আজ সে কমলাকে না বলিয়া, থাকিতে পারিত না, কোন নিগ্রহের একটানা আতঙ্কে তার দিনগুলি ভরিয়া উঠিয়াছে, পরের দিনের কি দুর্ভাবনায় অৰ্দ্ধেক রাত্রি তার বিনিদ্র কাটিয়া যায়। অনন্ত উঠিয়া দাড়াইল। কমলাকে কি বলিতে গিয়া হঠাৎ নীরবেই ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল । নীচে নামিয়া পিছনের মৃদু আহবানে অনন্ত চমকিয়া দাড়াইয়া পড়িল । মাধুরী বলিল, আমি আজ নিজে সন্দেশ করেছি। খেয়ে দেখবেন কেমন श्6शCछ ? অনন্ত বিবৰ্ণ মুখে বলিল, রোজ রোজ কষ্ট করে কেন তুমি এসব করতে যাও মাধুরী ? আমার কোন কষ্ট নেই। তবে আপনি যদি বিরক্ত হন 8vo)