পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী নন্দ অবাক হইয়া বলিল, “কি করে জানলে ?” যেন জানাটা সুমতির পক্ষে আশ্চৰ্য ব্যাপার। নন্দর ষে দু’টার বেশী জামা নাই, ক্ৰমাগত তালি লাগাইয়া এক জোড়া জুতাই সে যে আজ একবৎসর ব্যবহার করিতেছে, মাসের দশ দিন না। কাটিতে জলখাবারের কটা পয়সাও যে তাহার হাতে থাকে না, এসব যেন সুমতির অজানা ! “যেমন করেই জানি, টাকা চাই কি না বলুন !' 5 | F “দিচ্ছি। এনে। কিন্তু মাইনের টাকাগুলো কি করলেন ?" | নন্দর চােখ দুটি সহসা স্তিমিত হইয়া গেল।—“জুয়া খেলেছি।' ' “ষাটি টাকা জুয়া খেললেন ?” 'না, পঞ্চাশ । দশ টাকা। একজন ধার নিয়েছে।” সুমতি গম্ভীর হইয়া বলিল “শেষটা সত্যি হতে পারে, প্রথমটা খাটি মিথ্যা।” “মিথ্যা নয়। রূপক।” ‘রূপক না ছাই!’ বলিয়া সুমতি বালিশের তলা হইতে মনিঅৰ্ডারের রসিদের তাড়াটা টানিয়া বাহির করিল। বলিল, “কেদার মুখুয্যেকে আপনি প্ৰত্যেক মাসে পঞ্চাশ টাকা পাঠান। মুখুয্যেটি কে ?” নন্দ সংক্ষেপে জবাব দিল, “ভগ্নীপতি ।” “আমিও ওই রকম একটা কিছু অনুমান করেছিলাম। কিন্তু এ তো ভারী আশ্চৰ্য ব্যাপার! সীতা থাকে। আপনার, কাকার কাছে, মাসে মাসে মাইনের সব টাকাগুলি আপনি পাঠিয়ে দেন ভগ্নীপতিকে। পণে’র টাকা শোধ হচ্ছে নাকি ? শোধ না হলে সীতা স্বামীর ঘর করতে পাবে না ?” না । সীতাকে যে স্বামীর ঘর করতে হয় না ও তার দাম সুমতি ৷” ইহার পর নন্দ সব কথা খোলসা করিয়াই বলিয়াছিল। কেদার মুখুয্যে ছিল নন্দর পিতৃবন্ধু-নেশার বন্ধু ;—মদের। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নন্দর বাবার মাথাটাও বোধ হয় একটু খারাপ হইয়া গিয়াছিল। আর কোন যোগাযোগ ঘটিয়াছিল। কিনা এখন আর জানিবার নাই, জানিয়া লাভও নাই। কেদারের সঙ্গে হঠাৎ একদিন সীতার বিবাহ হইয়া গেল। r নন্দ কিছুই জানিত না । যে রাত্রে সীতার বিবাহ হয় সে রাত্রে কয়েকটি বন্ধুর সঙ্গে সে মহানন্দে থিয়েটার দেখিতেছে। 8