পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{ዝቑ] ফাকে ঘরে খাবার ঢাকা দিয়া রাখিয়া আসে। ইদুরের কথাটা সে ভোলে না। ঢাকনির উপর একটা দশসেরি শিল চাপাইয়া দেয়। রান্নাঘর হইতে শিলট নন্দর ঘরে বহিয়া নিয়া যাইতে তাহার যে রীতিমত কষ্ট হয় একথা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। চাকরকে বলিলে সে অবশ্য কাজটা করিয়া দিতে পারে, কিন্তু চাকরকে সুমতি বলে না । নন্দর সঙ্গে তাহার কলহ হইয়াছে, ইহার মধ্যে চাকরকে টানিতে তাহার ইচ্ছা হয় না । পরদিন সকালে খাবারের খবর নিতে দিয়া দ্যাখে আমন ভারি শিলট সরাইয়া ঢাকনি উন্টাইয়া ঘরময় খাবার ছড়াইয়া রাতারাতি ইদুরে কল্পনাতীত অত্যাচার করিয়া গিয়াছে! ঘরের মাঝখানে দাড়াইয়। চারিদিকে চাহিয়া সুমতি হাসিবে না কঁদিবে। ভাবিয়া পায় না । কি ছেলেমানুষ নন্দ ! কি করিয়া রাগের জবাব দিতে হয় আজও তা শেখে নাই। ঘরময় মিনতি লিখিয়া রাখিয়া গিয়াছে, - "আমায় প্রশ্ৰয় দিও করুণাময়ী । অথচ এ যেন খাপ খায় না, এ যেন অর্থহীন । সুমতির চোখে সহসা জল আসিয়া পড়ে। ঘরের কোণে ওই রঙচটা তোরঙ্গ, দেয়ালের গায়ে পেরেকে ঝোলানো আধ ময়লা একটা পাঞ্জাবী, তক্তপোষে পুরানো তোষকের বিছানা আর বালিশের পাশে ওই এক তাড়া মনি অর্ডারের রসিদ—ছড়ানো খাবারগুলির সঙ্গে এই সবের সামঞ্জস্য নাই যে একেবারেই। সুমতির মনে হয় বজের মত কঠোর ফুলের মত কোমল এই লোকটি যে তাহার জীবনে পদাৰ্পণ করিয়াছে তার মধ্যে প্রচুর অমঙ্গলের সম্ভাবনা লুকানাে আছে, ইহাকে তাহার ভয় করিয়া চলা উচিত। এ একদিন তাহাকে বিপন্ন করিবে । নন্দর প্রকৃতির গভীর দিকটার সঙ্গে সুমতির পরিচয় বেশী দিনের নয়। এক সপ্তাহও হয় নাই একদিন ভোরবেলা খাবারের বাটি ও জলের মুসটা টেবিলের উপর ঠক্‌ করিয়া নামাইয়া দিয়া সে বাহির হইয়া যাইতেছিল, ফস করিয়া সুইচ টিপিয়া নন্দ আলো জালিল । সুমতি চমকাইয়া বলিল, “ইস ! এ আবার কি ?” ‘একটা কথা আছে সুমতি । আলো না জালালে তো তুমি দাড়াবে না। অথচ একটা ভয়ানক দরকারী কথা তোমাকে এখন না বললেই নয়।” এ ভূমিকা সুমতি চিনিত । নন্দর বক্তব্য অনুমান করিতে তাহার বিলম্ব হইল না । সে বলিল, “পাচটা টাকা চাই, এই ত কথা ? Q 2や